বৃহস্পতিবার

কমন নেওয়ার সহজ নিয়ম

গণিত শেখার সহজ পদ্ধতি পাঠ-২ কমন নেওয়া

একাধিক পদে কমন নেওয়ার নিয়ম


বীজগণিতে একাধিক রাশি বা রাশি পদে মিল করন, যোগ-বিয়োগ ও গুন-ভাগ ও উৎপাদকে বিশ্লেষণের জন্য অনেক সময় কমন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আজকের আলোচনা সহজ পদ্ধতিতে কমন নেওয়ার কৌশল সম্পর্কে।


পাটিগণিত ও বীজগণিতে কমন নেওয়ার কৌশল, কমন নেওয়ার সহজ পদ্ধতি, অনুশীলন
সরলীকরণ


প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আশাকরি সকলে ভালো আছ। বীজগণিতে সরলীকরণ বা যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ করতে গেলে রাশি বা রাশি পদ সমূহের মাঝে কমন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আজকের আলোচনার বিষয় কমন নেওয়ার কৌশল বা পদ্ধতি সম্পর্কে। আশা করি সকলে খুবি উপকৃত হবে এ পদ্ধতি আয়ত্তকরণের মাধ্যমে। সকলের বোঝার সুবিধার্থে যথা সম্ভব সহজ ভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলাম। তাহলে আর কথা নয়। ফিরে যাওয়া যাক মূল প্রসঙ্গে।


প্রথমে জেনে নি বীজগনিত রাশি ও রাশি পদ কি?

সাধারণত এক বা একাধিক ধ্রবক সংখ্যা (1, 2, 3...ইত্যাদি) বা অজ্ঞাত রাশি সম্বলিত কোন সংখ্যা (2y, y, 2x.... এমন) যোগ বা প্লাস (+) ও বিয়োগ বা মাইনাস (-) দ্বারা যুক্ত থাকে তখন তাকে বীজগাণিতিক রাশি বলে। বীজগণিতিক রাশি সকলের আয়ত্তে আনতে উদাহরন তুলে ধরা যেতে পারে, 2a + 5ab - 3 বা 4x + 5y + 8 - z হল দুটি বীজগণিতিক রাশি। আশা করি বীজগণিতিক রাশি সম্পর্কে সকলে বুঝতে পেরেছ। এবার আসো বীজগণিতিক রাশি পদ বা পদ সম্পর্কে জেনে নি। উপরে লিখিত রাশি দুটিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাব ১ম রাশিতে 2a, 5ab, 3 যোগ ও বিয়োগ দ্বারা যুক্ত ছিল এবং ২য় রাশিতে 4x, 5y, 8, z এরা যোগ ও বিয়োগ দ্বারা যুক্ত ছিল তাই রাশি দুটিতে ব্যবহৃত এ সকল সংখ্যা গুলিকে এক একটি পদ বা রাশি পদ বলে।


এবার শিখে নি গ.সা.গু কি?

গ.সা.গু এর পূর্ণরূপ হল গরিষ্ঠ সাধারন গুণনীয়ক। মানে একা ধিক পদ গুলোর মাঝে সর্বাধিক মিল রয়েছে এমন গুণনীয়ক হল গ.সা.গু। একটি উদাহরনের সাহায্যে ব্যপারটি বুঝালে নিশ্চয় খুব সুন্দর ভাবে আয়ত্তে আসবে। ধরা যাক ১২ একটি সংখ্যা এর গুননীয়ক গুলো হল ১, ২, ২, এবং ৩ মানে ১২ কে ভাঙ্গালে এ কয়টি সংখ্যা পাওয়া যাই। সুতারং ১২ = ১ × ২ × ২ × ৩ লিখা যাই আবার ধরি ৪০ একটি সংখ্যা এর গুননীয়ক গুলি হল, ১, ২, ২, ২ এবং ৫। মানে ৪০ = ১ × ২ × ২ × ২ × ৫ লিখা যাই। ১২ ও ৪০ সংখ্যা দুটির গুননীয়কের মধ্যে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ১, ২, ২ উভয় সংখ্যার গুননীয়ক হিসাবে সমান ভাবে আছে কিন্তু ১২ এর মাঝে ৩ থাকলেও ৪০ এর মাঝে নেই অন্য দিকে ৪০ এর মাঝে ২ ও ৫ বেশি রয়েছে যা ১২ এর মাঝে নেই। সুতারং ১২ ও ৪০ এর গ.সা.গু হবে সর্বাধিক মিল গুলি অর্থাৎ ১, ২, ২। তাই ১২ ও ৪০ এর গ.সা.গু হবে ১ × ২ × ২ = ৪। এবার দেখ যে যেহেতু সংখ্যা দুটির গসাগু ৪ তাই ৪ দ্বারা উভয় সংখ্যাকে ভাগ করা যায়।


কমন নেওয়ার পদ্ধতি সমূহঃ

  • রাশি পদে পদ গুলোর গ.সা.গু-ই হল কমন। সুতারং রাশি গুলোর মাঝে কমন নিতে গেলে আমাদের পদ গুলোর গ.সা.গু বা মিল গুলোকে কমন নিতে হবে। ধরা যাক ax + ay + az একটি রাশি। রাশিটি খেয়াল করলে আমরা দেখতে পাব রাশিতে অবস্থিত প্রতিটি পদে a মিল রয়েছে। এখানে প্রতিটি পদে সর্বাধিক সংখ্যক মিল রয়েছে একটি করে a। সুতারং এদের গসাগু হল a এবং কমন যাবে a। রাশিটি থেকে a কমন নিলে দাঁড়াবে। a(x + y + z)
  • কোন রাশি থেকে বা পদ থেকে বিয়োগ বা মাইনাস চিহ্ন (-) কমন নিলে ব্রাকেটে অবস্থিত পদ গুলোর চিহ্ন পরিবর্তন করতে হয়। ধরি - a - b + c একটি রাশি। রাশি টি থেকে মাইনাস কমন নিলে দাঁড়াবে -(a + b - c), এ খানে মাইনাস কমন নেওয়ায় -a পরিবর্তন হয়ে a বা +a হয়েছে, -b পরিবর্তন হয়ে +b হয়েছে এবং + c পরিবর্তন হয়ে -c হয়েছে।
  • পদ গুলো থেকে প্লাস কমন নিলে চিহ্ন কোন প্রকার পরিবর্তন হয় না যেমন, +a +b -c রাশিথেকে + কমন নিলে দাঁড়াবে +(a +b -c), অর্থাৎ প্লাস বা যোগ চিহ্ন কমন নিলে চিহ্ন পরিবর্তন করলে ভুল হয়ে যাবে।
  • কমন নেওয়া কোন সংখ্যাকে ব্রাকেট উঠিয়ে ব্রাকেটের মাঝে নিতে চাইলে এই সংখ্যা ও এই সংখ্যার সাথে থাকা চিহ্ন উভয়ি ব্রাকেটে থাকা পদ গুলির সাথে গুন হয়ে যাবে। -2a(b + c - 3) রাশি থেকে তাই ব্রাকেট উঠিয়ে দিলে দাঁড়াবে, -2ab - 2ac + 6a, এখানে -2a কে ব্রাকেটের মাঝে অবস্থিত সকল পদের সাথে গুন করা হয়েছে। তাই ব্রাকেট উঠাতে হলে ব্রাকেটের আগে থাকা সংখ্যা ও চিহ্ন গুন করতে হয়।


উৎপাদকে বিশ্লেষন করার ক্ষেত্রে কমন নেওয়ার ভূমিকা অনেক। আর উৎপাদক হল সকল অংকের ভিত্তি। তাই উৎপাদকে বিশ্লেষন করে, গ.সা.গু, ল.সা.গু নির্নয় বা গুন-ভাগ করে যোগ-বিয়োগ সকল ক্ষেত্রেই কমন নেওয়ার ভূমিকা রয়েছে।


শিক্ষার্থী বন্ধুরা আশাকরি তোমরা এখন থেকে খুব সহজেই কমন নিতে পারবে। গনিত খুব মজার বিষয় যতি সেটা পারা যায়। উপরোক্ত নিয়ম গুলো অনুসরনের মাধ্যমে আশা করি আজ থেকে কোন গাণিতিক সমস্যার খুব দ্রুত ও সহজ ভাবে সমাধান করতে পারবে।


নিজে করঃ

মিল গুলো কমন নাও অথবা চিহ্ন কমন নাও অথবা জোড়ায় জোড়ায় কমন নাও-

a) - a - b - c
b) - a + b - c
c) + a - b + c
d) - ab - bc + b²
e) + a³ - a⁵ - a⁴
f) a²b - ab²
g) - ab² - b³c²
h) a⁴b + b⁴c + da²
i) a(a + b) + c(a + b)
j) b(a - b) + c(a - b)
k) a(a + c) - b(a + c)
l) ab + a² + ca + bc
m) d²ab + a²d² + cd²a + bcd²
n) a² - ab + ac - bc
o) a² + ab - bc - ac
p) - aeb - ea² - aec - bce
q) ²/₃a² + 2b + ¹/₃c
r) ¹/ₐb² + a + ac²


এই আর্টিকেলটি পড়ে তোমাদের আশাকরি অনেকটা কাজে লাগবে। আরটিকেলটি সম্পর্কে শেয়ার করে বন্ধুদের জানাতে ভুলোনা যেন। বুঝতে কোন প্রকার সমস্যা হলে এখানে কমেন্ট করতে পার বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করো। তোমার ভালো লাগা বা যে কোন অনুভূতি জানিয়ে এখানে কমেন্ট করলে খুব খুশি হব। কোন প্রকার ভুল হলে ক্ষমা কোর এবং কমেন্ট করে জানিয়ে সংশোধন করতে সাহায্য কোর। তোমাদের সুস্থতা কামনা করে আজ এ পর্যন্তই। আশা করি আবার অন্য কোন লিখা নিয়ে দ্রুত হাজির হতে পারব।



কে-মাহমুদ 
৫-১২-২০১৯


2 comments

আপনারা এই আর্টিকেলটি খুব সুন্দর এবং সহজভাবে প্রকাশ করেছেন। খুব ভালো লেগেছে

সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


1timeschool.com এর পক্ষে,

রোদেলা

নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon