শুক্রবার

মধ্যক নির্ণয়ের সূত্র ও নিয়ম

মধ্যক নির্ণয় করার সহজ নিয়ম


এখানে যা থাকছে---

  • মধ্যক নির্ণয়ের সূত্রসমূহ
  • জোড় গণসংখ্যার মধ্যক
  • বিজোড় গণসংখ্যার মধ্যক
  • মধ্যক করার সহজ নিয়ম
  • চলকের পরিচয় সহ মধ্যক নির্ণয়

মধ্যক নির্ণয়ের সূত্রসমূহ, জোড় গণসংখ্যার মধ্যক, বিজোড় গণসংখ্যার মধ্যক, মধ্যক করার সহজ নিয়ম, চলকের পরিচয় সহ মধ্যক নির্ণয়
মধ্যক নির্ণয়ের সূত্র ও নিয়ম

মধ্যক কি বা কাকে বলেঃ

সাধারণত মধ্য বা মাঝের পদ বা সংখ্যা কে মধ্যক বলে। পরিসংখ্যানে (Statistics) মধ্যকের ভুমিকা অপরিসীম। ইংরেজি Median শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ মধ্যক। শুধু পরিসংখ্যান নয় সকল ক্ষেত্রেই আমরা মধ্যক বলতে তাকেই বুঝি যে মাঝে অবস্থান করে। অর্থাৎ যে কম নয় আবার বেশি নয়, যে নিচু নয় আবার উচু নয়, যে ছোট নয় আবার বড় নয়, যে ঠান্ডা নয় আবার গরম নয় এমন অবস্থানকে মধ্যক বলে। গল্পে গল্পে বলতে গেলে এক বৃদ্ধের তিন ছেলে ছিল। বড় ছেলের নাম ছিল রহিম। মেঝো ছেলের নাম ছিল করিম। আর ছোট ছেলের নাম ছিল যব্বার। বৃদ্ধের মেঝ বা মাঝের ছেলের নাম করিম এবং সে রহিমের চেয়ে বড় কিন্তু যব্বারের চেয়ে ছোট। সুতারং বৃদ্ধের ছেলেদের মাঝে মধ্যক ছেলে হলো করিম। করিম মধ্যক কারন সে বয়সের দিক দিয়ে তিন ছেলের মাঝে মাঝামাঝিতে অবস্থান করছে। অর্থাৎ মধ্যক বলতে গণসংখ্যার সেই মান কে বোঝায় যে মান বা সংখ্যা বা পদ ঠিক মাঝামাঝি অবস্থান করে।


ক্রমযোজিত গণসংখ্যা কি এবং নির্ণয় করার নিয়মঃ

ক্রম শব্দের অর্থ পর পর। যোজিত শব্দের অর্থ যোগ। সুতারং ক্রমযোজিত শব্দের অর্থ পর পর যোগ। মনেকরি রহিমের বয়স ৩, করিমের বয়স ২, যব্বারের বয়স ৬। এখানে রহিম করিম ও যব্বারের ক্রমযোজিত গণসংখ্যা হবে, ০+রহিম, ০+রহিম++করিম, ০+রহিম+করিম+যব্বার। অর্থাৎ ০+৩, ০+৩+২, ০+৩+২+৬ বা ৩, ৫, ১১। এখানে রহিমের আগে কোন সংখ্যা ছিল না তাই রহিমের সাথে ০ যোগ করা হয়েছে। করিমের আগে ০+রহিম ছিল বলে ০+রহিম+করিম করা হয়েছে, যব্বারের আগে ০+রহিম+করিম ছিল বলে ০+রহিম+করিম+যব্বার করা হয়েছে। এটি অন্য ভাবেও করা যায়, আগের যোগফল+রহিম, আগের যোগফল+করিম, আগের যোগফল+যব্বার। অর্থাৎ ০+৩=৩, ৩+২=৫, ৫+৬=১১ বা, ৩, ৫, ১১। নিম্নে ছকে চিত্রাকারে দেখানো হলো-

মধ্যক নির্ণয়ের সূত্রসমূহ, জোড় গণসংখ্যার মধ্যক, বিজোড় গণসংখ্যার মধ্যক, মধ্যক করার সহজ নিয়ম, ক্রমযোজিত গণসংখ্যার নিয়ম
ক্রমযোজিত গনসংখ্যা নির্ণয়ের নিয়ম


মধ্যক নির্ণয়ে fm বলতে কি বুঝায়ঃ

ইংরেজী Maximum Modulation Frequency এর সংক্ষিপ্ত রূপ fm. এখানে Maximum Modulation Frequency বলতে সর্বাধিক সূচিত গণসংখ্যা বা সর্বাধিক মড্যুলেশন ফ্রিকোয়েন্সি বলে। যে ঘরে মধ্যক অবস্থান করে সেই ঘরের গণসংখ্যা কে fm ধরা হয়।


মধ্যক নির্ণয়ে Fc বলতে কি বুঝায়ঃ

Carrier Frequency এর সংক্ষিপ্ত রূপ Fc. পরিসংখ্যানে Fc বলতে মধ্যক বহনকারী ক্রমযোজিত গণসংখ্যা কে বোঝানো হয়ে থাকে। যে ঘরে মধ্যক অবস্থিত তার আগের ঘরের ক্রমযোজিত গণসংখ্যা কে Fc বলা হয়ে থাকে।


মধ্যক নির্ণয়ের আগে যা জানা প্রয়োজনঃ

  • ১. মধ্যক নির্ণয়ের জন্যে পরিসংখ্যানিক তথ্য উপাত্তে গণসংখ্যা কে f দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
  • ২. পরিসংখ্যানিক তথ্য উপাত্তে মধ্যক নির্ণয়ের জন্য ক্রমযোজিত গণসংখ্যা কে F দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
  • ৩. মধ্যক নির্ণয়ের জন্য মধ্য মানের অবস্থান কে ক্রমযোজিত গণসংক্যায় Fc দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়।
  • ৪. গণসংখ্যা বোঝাতে ছোট হাতের f এবং ক্রমযোজিত গণসংখ্যা বোঝাতে বড় হাতের F ব্যবহার করা হয়।
  • ৫. মোট গণসংখ্যা বা তথ্য উপাত্তের মোট সংখ্যা কে আধুনিক পরিসংখ্যানে n ধরা হয়।
  • ৬. মধ্যকের মান সবসময় মাঝামাঝি হয়।
  • ৭. ছক যুক্ত বা ছক কৃত তথ্যে n/২ বা n÷২ করলে যে উত্তর পাওয়া যাবে, ক্রমযোজিত ঘরের সংখ্যা গুলোর মাঝে প্রথম যে ঘরে এই উত্তর থেকে বড় সংখ্যা দেখা যাবে সেই ঘর কে মধ্যক শ্রেণী ধরতে হবে।
  • ৮. ছককৃত তথ্যে ক্রমযোজিত গণসংখ্যার ঘরে অবস্থিত যে সকল সংখ্যা n/২ বা n÷২ থেকে ছোট তাদের মাঝে সবসময় Fc থাকে এবং এই ছোট সংখ্যা গুলোর শেষ ঘরের ক্রমযোজিত গণসংখ্যা কে Fc ধরা হয়।
  • ৯. যে ঘরে Fc ধরা হয় তার পরের ঘরকে মধ্যক ঘর বলা হয় এবং মধ্যক ঘরে মধ্যমান বা মধ্যক অবস্থান করে, মধ্যক ঘরের গণসংখ্যা কে fm বলা হয়।
  • ১০. বিজড় সংখ্যা কে দুই ভাগ করতে বা ২ দ্বারা ভাগ করতে গেলে তা ভাগ করা সম্ভব হয় না তাই বিজোড় সংখ্যা কে ২ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য বা ভাগ করতে সংখ্যাটির সাথে ১ যোগ করে জোড় বানিয়ে তারপর ভাগ করতে হয়।
  • ১১. মধ্যকের সূত্র L+(n/২-Fc)h/fm বা L+(n÷২-Fc)h÷fm এ চলকের বর্ণনা বা বিবরণ বা পরিচয়,  L = মধ্যক শ্রেণীতে থাকা শ্রেণী ব্যপ্তি ঘরের সর্বনিম্ন মান, n =  গণসংখ্যা,  Fc = মধ্যক শ্রেণীর আগের ঘরের ক্রমযোজিত গণসংখ্যা,  h = শ্রেণীর ব্যপ্তি বা সীমা (যে কোন শ্রেণীর সর্বচ্চ মান থেকে সর্বনিম্ন মান বিয়োগ করে তার সাথে ১ যোগ করলে h এর মান পাওয়া যাবে), fm = মধ্যক শ্রেণীর গনসংখ্যা।


মধ্যক নির্ণয়ে তথ্য উপাত্তের প্রকাশগত ধারনাঃ

তথ্য উপাত্তের অর্থাৎ পরিসংখ্যান বা statistics এ মধ্যক নির্ণয়ের জন্যে তথ্য উপাত্তের উপস্থাপনগত ধারনা থাকা আবশ্যক। তথ্য উপাত্ত আমরা নানা ভাবে প্রকাশ করতে পারি। বোঝার সুবিধার্থে তথ্য উপাত্তের প্রকাশ বা উপস্থাপনের উপর ভিত্তি করে তথ্য উপাত্তকে প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত করতে পারি, যথা-

  • ১. ছক বিহীন তথ্য উপাত্ত।
  • ২. ছক যুক্ত তথ্য উপাত্ত।

ছক বিহীন তথ্য উপাত্ত আবার আমরা ২ ভাবে পেয়ে থাকি, যথা-

  • ১.ক. অবিন্যস্ত ছক বিহীন তথ্য উপাত্ত।
  • ১.খ. বিন্যস্ত ছক বিহীন তথ্য উপাত্ত।

বিন্যস্ত ছক বিহীন তথ্য উপাত্ত আবার ২ ধরনের হয়ে থাকে, যথা-

  • ১.খ.১. বিজোড় সংখ্যাক বিন্যস্ত ছক বিহীন তথ্য উপাত্ত।
  • ১.খ.২. জোড় সংখ্যাক বিন্যস্ত ছক বিহীন তথ্য উপাত্ত।

অন্যদিকে ছক যুক্ত তথ্য উপাত্ত আমরা প্রধানত ২ ভাবে পেয়ে থাকি, যথা-

  • ২.ক. শ্রেণীবিহীন ছক যুক্ত তথ্য উপাত্ত।
  • ২.খ. শ্রেণী যুক্ত ছক যুক্ত তথ্য উপাত্ত।

তথ্য উপাত্ত এমন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশ বা উপস্থাপন থাকে বলেই মধ্যক নির্ণয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কৌশল ও সূত্র অবলম্বন করতে হয়। নিম্নে তথ্য উপাত্তের উপস্থাপনের উপর ভিত্তি করে মধ্যক নির্ণয়ের সূত্র ও প্রক্রিয়া গুলো সহজ ভাবে উপস্থাপন করা হলো।



মধ্যক নির্ণয়ের সূত্র সমূহঃ

  • ১. ছক বিহীন বিজোড় সংখ্যাক তথ্য উপাত্তের ক্ষেত্রে, মধ্যক= (n+১)/২ বা (n+১)÷২ তম পদ অথবা, মধ্যপদের মান-ই মধ্যক।
  • ২. ছক বিহীন জোড় সংখ্যাক তথ্য উপাত্তের ক্ষেত্রে, মধ্যক= {n/২ তম পদ + (n/২+১) তম পদ}/২ অথবা, {n÷২ তম পদ + (n÷২+১) তম পদ}÷২ অথবা, মধ্য পদ দুটির যোগফল /২ অথবা, মধ্য পদ দুটির গড়।
  • ৩. শ্রেণী বিহীন ছক যুক্ত তথ্যের মধ্যক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে, মধ্যক নির্ণয়ের জন্যে ক্রমযোজিত গণসংখ্যার ঘর কেটে গণসংখ্যা জোড় হলে n/২ বা n÷২ তম পদ বের করতে হবে আর বিজোড় হলে (n/২)+১ বা (n÷২)+১ তম পদ বের করতে হবে এবং ক্রমযোজিত গণসংখ্যায় প্রাপ্ত মানের অবস্থান দেখতে হবে। অতএব, মধ্যক= যে ঘরে মধ্যপদের অবস্থান সেই ঘরের মান।
  • ৪. শ্রেণী যুক্ত এবং ছক যুক্ত তথ্যের মধ্যক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে, মধ্যক নির্ণয়ের জন্যে আগের নিয়মেই ক্রমযোজিত গণসংখ্যার ঘর কাটতে হবে এবং গণসংখ্যা জোড় হলে n/২ তম পদ বের করতে হবে ও বিজোড় হলে (n/২)+১ বা (n÷২)+১ তম পদ বের করতে হবে। ছকে ক্রমযোজিত গণসংখ্যায় প্রাপ্ত মানের অবস্থান দেখতে হবে। ছকে চলকের অবস্থান ও মান ধরতে হবে এবং সূত্রে মান বসাতে হবে। অতএব, মধ্যক= L+(n/২-Fc)h/fm বা L+(n÷২-Fc)h÷fm.
মধ্যক নির্ণয়ের সূত্রসমূহ, জোড় গণসংখ্যার মধ্যক, বিজোড় গণসংখ্যার মধ্যক, মধ্যক করার সহজ নিয়ম, চলকের পরিচয় সহ মধ্যক নির্ণয়
মধ্যক নির্ণয়ের সূত্র


ছক বিহীন তথ্য উপাত্তের মধ্যক নির্ণয়ের সূত্র ও নিয়মঃ

আমরা পূর্বেই জেনেছি যে ছক বিহীন তথ্য উপাত্ত বিন্যস্ত ও অবিন্যস্ত উভয় ভাবে থাকতে পারে। ছক বিহীন তথ্যের মধ্যক নির্ণয়ের জন্যে কাজ গুলো নিম্নরূপ-

  • ১. প্রথম কাজ হবে তথ্য গুলোকে ছোট থেকে বড় অথবা বড় থেকে ছোট ক্রমে সাজিয়ে বিন্যস্ত করে নেওয়া।
  • ২. তথ্য উপাত্তের সংখ্যা বা গণসংখ্যা জোড় নাকি বিজোড় তা লক্ষ্য করা।
  • ৩. তথ্য উপাত্ত বা গণসংখ্যা জোড় হলে জোড়ের নিয়ম ও সূত্র প্রয়োগ করে মধ্যক নির্ণয় করা।
  • ৪. তথ্য উপাত্ত বা গণসংখ্যা বিজোড় হলে বিজোড়ের নিয়ম ও সূত্র প্রয়োগ করে মধ্যক নির্ণয় করা।

নিম্নে উদাহরণের সাহায্যে বিস্তারিত সহজ ভাবে তুলে ধরা হলো-

উদাহরণ-১ঃ

মনেকরি ৫, ১০, ৮ সংখ্যা গুলোর মধ্যক নির্ণয় করতে হবে।


ব্যাখ্যাঃ

প্রথত - এখানে তথ্য উপাত্ত এলোমেলো বা অবিন্যস্ত তাই মানের ঊর্ধ/অধঃ ক্রমে সাজিয়ে বিন্যস্ত করে নিতে হবে। এখানে, তথ্য উপাত্ত মানের ঊর্ধ্ব ক্রমে বা ছোট থেকে বড় সাজিয়ে বিন্যস্ত কিরে পাই, ৫, ৮, ১০

দ্বিতীয়ত - বিন্যস্ত করার পর তথ্য উপাত্তের সংখ্যা বা গণসংখ্যা গণনা করে দেখতে হবে এবং গনসংখ্যা জোড় না বিজোড় তা যাচাই করতে হবে। এখানে মোট তথ্য উপাত্তের সংখ্যা বা গণসংখ্যা ৩ টি যা বিজোড়।

তৃতীয়ত - এখানে গণসংখ্যা ৩ টি যা বিজোড় হওয়ায় বিজোড়ের সূত্র প্রয়োগ করতে হবে। ছক বিহীন তথ্যের গণসংখ্যা বিজোড় হলে তার ২ টি সূত্র প্রয়োগ করা যেতে পারে, যথা-

i) গণসংখ্যা বিজোড় হলে মধ্যক নির্ণয়ের সাধারণ সূত্র:
এখানে গণসংখ্যা বিজোড় অতএব,
মধ্যক = মধ্যপদের মান।
এখানে মধ্য পদ বা মাঝের পদের মান ৮, সুতারং মধ্যক ৮ ।
ii) গণসংখ্যা বিজোড় হলে মধ্যক নির্ণয়ের আধুনিক সূত্র:

এখানে গণসংখ্যা n = ৩, যা বিজোড় অতএব,
মধ্যক = (n+১)/২ তম পদ
= (৩+১)/২ তম পদ
= ৪/২ তম পদ
= ২ তম পদ
এখানে বিন্যস্ত উপাত্ত প্রথম থেকে গণনা করে পাই ২ তম পদ ৮, সুতারং মধ্যক ৮ ।


সমাধানঃ

তথ্য গুলো কে মানের ঊর্ধ্ব ক্রমে সাজিয়ে পাই, ৫, ৮, ১০
এখানে গণসংখ্যা ৩ যা বিজোড়
অতএব,
মধ্যক=মধ্যপদের মান,
এখানে মধ্যপদ ৮
অতএব, মধ্যক = ৮


অন্য নিয়ম

তথ্য গুলো কে মানের ঊর্ধ্ব ক্রমে সাজিয়ে পাই, ৫, ৮, ১০
এখানে গণসংখ্যা n= ৩ যা বিজোড়
অতএব,
মধ্যক= (n+১)/২ তম পদ
=(৩+১)/২ তম পদ
=৪/২ তম পদ
=২ তম পদ
এখানে ২ তম পদ ৮
অতএব, মধ্যক = ৮



উদাহরণ-২ঃ

মনেকরি ৫, ১০, ৮, ৬ সংখ্যা গুলোর মধ্যক নির্ণয় করতে হবে।


ব্যাখ্যাঃ

প্রথত - এখানে তথ্য উপাত্ত এলোমেলো তাই মানের ঊর্ধ ক্রমে সাজিয়ে বিন্যস্ত করতে হবে। এখানে, তথ্য উপাত্ত ঊর্ধ্ব ক্রমে সাজিয়ে পাই, ৫, ৬, ৮, ১০

দ্বিতীয়ত - বিন্যস্ত করার পর গনসংখ্যা জোড় না বিজোড় তা যাচাই করতে হবে। এখানে মোট গণসংখ্যা ৪ টি যা জোড়।

তৃতীয়ত - এখানে গণসংখ্যা ৪ টি যা জোড় তাই জোড়ের সূত্র প্রয়োগ করতে হবে। ছক বিহীন তথ্যে গণসংখ্যা জোড় হলে ২ টি সূত্র প্রয়োগ করা যায়, যথা-


i) গণসংখ্যা জোড় হলে মধ্যক নির্ণয়ের সাধারণ সূত্র:

এখানে গণসংখ্যা জোড় অতএব,
মধ্যক = মধ্যপদ দুটির গড় অথবা, (মধ্যপদ দুটির সমষ্টি বা যোগফল)/২।
এখানে মধ্য পদ দুটি বা মাঝের পদ দুটির মান ৬ ও ৮, সুতারং মধ্যক = (৬+৮)/২
= ১৪/২
= ৭


ii) গণসংখ্যা জোড় হলে মধ্যক নির্ণয়ের আধুনিক সূত্র:

এখানে গণসংখ্যা n = ৪, যা জোড় অতএব,
মধ্যক = {(n /২) তম পদ + (n/২+১) তম পদ }/২
= {(৪ /২) তম পদ + (৪/২+১) তম পদ }/২
= { (২ তম পদ) + (২+১) তম পদ}/২
= {২ তম পদ + ৩ তম পদ}/২
{৬ + ৮}/২ [এখানে, ২ তম পদ ৬ ও ৩ তম পদ ৮]
= ১৪/২
= ৭
অতএব, মধ্যক = ৭



সমাধানঃ

তত্য গুলো মানের ঊর্ধ্ব ক্রমে সাজিয়ে পাই, ৫, ৬, ৮, ১০
এখানে গণসংখ্যা ৪ যা জোড়
অতএব, মধ্যক = (মধ্যপদ দুটির যোগফল) /২
= (৬ + ৮)/২
= ১৪/২
= ৭


অন্য নিয়ম-


তত্য গুলো মানের ঊর্ধ্ব ক্রমে সাজিয়ে পাই, ৫, ৬, ৮, ১০
এখানে গণসংখ্যা ৪ যা জোড়
অতএব, মধ্যক = {n/২ তম পদ + (n/২+১) তম পদ}/২
= {৪/২ তম পদ + (৪/২+১) তম পদ}/২
= {২ তম পদ + (২+১) তম পদ}/২
= {২ তম পদ + ৩ তম পদ}/২
= {৬+৮}/২
= ১৪/২
= ৭


ছক যুক্ত তথ্য উপাত্তের মধ্যক নির্ণয়ের সূত্র ও নিয়মঃ

আশাকরি আমরা ইতিমধ্যে ছক বিহীন তথ্যের মধ্যক নির্ণয়ের সূত্র ও পদ্ধতি খুব সহজেই আয়ত্ত করতে পেরেছি। এবার আমরা শিখবো ছক যুক্ত তথ্যের মধ্যক নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি। ছক যুক্ত তথ্য সাধারণত ২ ভাবে থাকতে পারে, শ্রেণী বিহীন ও শ্রেণী যুক্ত। তাই ছক যুক্ত তথ্যের মধ্যক নির্ণয়ের পদ্ধতিকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। ছক যুক্ত তথ্যের মধ্যক নির্ণয় করতে গেলে নিম্নোক্ত ধাপ গুলো অনুসরন করতে হবে-

  • ১. প্রথমত - লক্ষ্য করতে হবে যে তথ্য গুলো শ্রেণী যুক্ত নাকি শ্রেণী বিহীন।
  • ২. দ্বিতীয়ত - ছকে নতুন একটি ঘর কাটতে হবে যার নাম হবে ক্রমযোজিত গনসংখ্যা এবং ক্রমযোজিত গনসংখ্যা নির্ণয় করতে হবে।
  • ৩. তৃতীয়ত - ছকে মান ধরে সূত্র ও নিয়ম অনুযায়ী মধ্যক নির্ণয় করতে হবে।

নিম্নে উদাহরণের সাহায্যে শ্রেণী বিহীন তথ্যের মধ্যক নির্ণয়ের নিয়ম বিস্তারিত ও সহজ ভাবে তুলে ধরা হলো-


উদাহরণ-৩ঃ



প্রাপ্ত নম্বর গনসংখ্যা (f)
৫০
৬০
৭০
৮০
৯০


ব্যাখ্যাঃ

উপরের তথ্য থেকে মধ্যক নির্ণয়ের ধাপ সমূহ হবে নিম্ন রূপ-

  • ১. উপরের তথ্য থেকে এটা দেখা যাচ্ছে যে প্রদত্ত তথ্য উপাত্তে বা গণসংখ্যা সারণিতে কোন প্রকার শ্রেণী বা শ্রেণী ব্যপ্তি বা শ্রেণী ব্যবধান নেই সুতারং এটি শ্রেণী বিহীন তথ্য উপাত্ত।
  • ২. ছকে থাকা তথ্যের মধ্যক নির্ণয় করতে গেলে সবসময় ক্রমযোজিত ঘর কাটতে হয়। সুতারং শ্রেণী বিহীন তথ্য উপাত্তের পাশে আরেকটি ক্রমযোজিত গণসংখ্যার ঘর কাটলে গণসংখ্যা সারণি দাড়ায়-

প্রাপ্ত নম্বর গনসংখ্যা (f) ক্রমযোজিত গণসংখ্যা (F)
৫০
৬০
৭০
৮০
৯০ ১০
n=১০

  • ৩. এই ধাপে সূত্র বা পদ্ধতি প্রয়োগ করে মধ্যক নির্ণয় করতে হবে। প্রদত্ত তথ্যে মোট গণসংখ্যা n=১০ যা জোড়।

অতএব, মধ্যক হবে এর মাঝামাঝি তম পদ বা মাঝের পদ। আমরা জানি কোন সংখ্যা কে ২ দিয়ে ভাগ করলে মধ্য সংখ্যা বের হয়। এ ক্ষেত্রে মধ্যক হবে মাঝামাঝি সংখ্যা অর্থাৎ n/২ তম পদ বা, ১০/২ তম পদ বা, ৫ তম পদ। (বিজোড় হলে (n+১)/২ তম পদ বের করতে হবে)

এবার ক্রমযোজিত গনসংখ্যার দিকে তাকালে দেখা যায় যে ৫ থেকে ছোট ক্রমযোজিত গনসংখ্যা ১ম ঘরে যা ২, ৫ থেকে ছোট ক্রমযোজিত গনসংখ্যা ২য় ঘরে যা ৩। ৫ থেকে ছোট ক্রমযোজিত গণসংখ্যার আর কোন ঘর নেই। আমরা জানি যে n/২ এর মান বের করার পর তা থেকে ছোট ক্রমযোজিত গণসংখ্যা থাকা ঘর গুলোর পরের ক্রমযোজিত গণসংখ্যার ঘরে মধ্যমান অবস্থান করে। n/২ করে আমরা মান পেয়েছি ৫ এবং ১ম দুই ঘরের ক্রমযোজিত গণসংখ্যার মান ৫ থেকে ছোট। সুতারং মধ্যমান পাওয়া যাবে ২য় ঘরের পরের ঘরে, অর্থাৎ ৩য় ঘরে। ৩য় ঘরের ক্রমযোজিত গণসংখ্যা ৬, গণসংখ্যা ৩ এবং প্রাপ্ত নম্বর ৭০ এবং এটি মধ্যক শ্রেণী। এই শ্রেণীর প্রাপ্ত নম্বর ৭০ বলে মধ্যক ৭০। এই ধরনের ছক থেকে মধ্যক নির্ণয় করতে fm, Fc, L ও h এর মান প্রয়োজন হয় না। তাই এসবের মান ধরার বা দেখানোর আবশ্যকতা নেই।


সমাধানঃ

প্রাপ্ত তথ্য থেকে মধ্যক নির্ণয়ের জন্যে ক্রমযোজিত গনসংখ্যা সারণি তৈরি করি-

প্রাপ্ত নম্বর গনসংখ্যা (f) ক্রমযোজিত গণসংখ্যা (F)
৫০
৬০
৭০
৮০
৯০ ১০
n=১০

এখানে গণসংখ্যা n=১০ যা জোড় যা ২ দ্বারা বিভাজ্য
এখন, n/২ = ১০/২ = ৫
৫ তম পদ ক্রমযোজিত গনসংখ্যার ৬ মান বিশিষ্ট ঘরে অবস্থিত এবং এই শ্রেণীর মান ৭০
অতএব, মধ্যক = ৭০



উদাহরণ-৪ঃ

নিম্নে উদাহরণের সাহায্যে শ্রেণী যুক্ত তথ্যের মধ্যক নির্ণয়ের পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-

শ্রেণী ব্যপ্তি গনসংখ্যা (f)
৪১-৫০
৫১-৬০
৬১-৭০
৭১-৮০
৮১-৯০

ব্যাখ্যাঃ

  • ১. উপরের তথ্যটি বা গণসংখ্যা সারণিটি শ্রেণী যুক্ত। সুতারং এই তথ্যের মধ্যক নির্ণয়ের জন্যে শ্রেণী যুক্ত পদ্ধতির নিয়ম অনুসরন করতে হবে।
  • ২. আমরা জানি ছকে থাকা তথ্যের মধ্যক নির্ণয় করতে গেলে ছকে ক্রমযোজিত ঘর কাটতে হয়। সুতারং গণসংখ্যা সারণির সাথে আরেকটি ক্রমযোজিত গণসংখ্যার ঘর টানলে গণসংখ্যা সারণি দাড়াবে-

প্রাপ্ত নম্বর গনসংখ্যা (f) ক্রমযোজিত গণসংখ্যা (F)
৪১-৫০
৫১-৬০ ৩(Fc)
৬১(L)-৭০ ৩(fm)
৭১-৮০
৮১-৯০১০
n=১০

  • ৩. ক্রমযোজিত গণসংখ্যা ঘর কাটার পর এই ধাপে সূত্র প্রয়োগ করতে হবে। এখানে মোট গণসংখ্যা n=১০ যা জোড়। আগেই বলা হয়েছে কোন সংখ্যা কে ২ দিয়ে ভাগ করলে মধ্য সংখ্যা বের হয়। এ ক্ষেত্রে মধ্যক শ্রেণী হবে n/২ তম পদ যে শ্রেণীতে আছে সেই শ্রেণী। n=১০ হওয়ায় মধ্যক শ্রেণী হবে ১০/২ তম পদ যুক্ত শ্রেণী বা, ৫ তম পদ যুক্ত শ্রেণী। (বিজোড় হলে (n+১)/২ তম পদ যুক্ত শ্রেণী বের করতে হবে)

এবার ক্রমযোজিত গনসংখ্যার ঘরে দেখা যায় ৫ থেকে ছোট ক্রমযোজিত গনসংখ্যা আছে ১ম ও ২য় ঘরে। আমরা জানি যে n/২ এর মান বের করার পর তা থেকে ছোট ক্রমযোজিত গণসংখ্যা থাকা ঘরের শেষ ঘরে থাকা মান কে Fc ধরা হয় এবং ৫ থেকে ছোট ক্রমযোজিত ঘর গুলোর পরের ক্রমযোজিত গণসংখ্যার ঘরে মধ্যমান অবস্থান করে। n/২ করে আমরা মান পেয়েছি ৫ এবং ১ম দুই ঘরের ক্রমযোজিত গণসংখ্যার মান ৫ থেকে ছোট। ১ম ঘরের ক্রমযোজিত সংখ্যা ২ এবং ২য় ঘরের ক্রমযোজিত সংখ্যা ৩। এখানে ৫ অর্থাৎ n/২ থেকে ছোট শেষ ঘরের মানকে Fc ধরা হয়। অতএব এখানে Fc=৩। অন্যদিকে ৫ থেকে বা n/২ থেকে ছোট ঘর গুলোর পরের ঘর মধ্যক শ্রেণী হয় বলে এখানে মধ্যমান পাওয়া যাবে ২য় ঘরের পরের ঘরে, অর্থাৎ ৩য় ঘরে। ৩য় ঘরের ক্রমযোজিত গণসংখ্যা ৬, গণসংখ্যা ৩ এবং শ্রেণী ব্যপ্তি ৬১-৭০ এবং এটি মধ্যক শ্রেণী। সুতারং fm হবে এই শ্রেণীর গণসংখ্যার মান অর্থাৎ fm=৩। আবার L এর মান মধ্যক শ্রেণীর শ্রেণী ব্যপ্তির নিম্ন সীমা বা প্রথম সংখ্যা। এখানে মধ্যক শ্রেণীর শ্রেণী ব্যপ্তি ৬১-৭০ এবং এখানে নিম্ন সীমা বা প্রথম সংখ্যা ৬১, অতএব L=৬১। আবার h বলতে (শ্রেণী ব্যপ্তির উচ্চ সীমা + নিম্ন সীমা) +১ কে বোঝায়। এখানে শ্রেণীর উচ্চ সীমা ৭০, নিম্ন সীমা ৬১। অতএব, h=(৭০-৬১)+১=৯+১=১০

উপরোক্ত মান গুলো মধ্যক নির্ণয়ের সূত্রে প্রয়োগ করলে দাড়াবে-


মধ্যক=L+(n/২-Fc)h/fm
=৬১+(১০/২-৩)১০/৩
=৬১+(৫-৩)৩.৩৩
=৬১+(২)৩.৩৩
=৬১+৬.৬৬
=৬৭.৬৬

অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা পায় যে-


n/২= মোট গণসংখ্যা কে ২ দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত ভাগফল
fm=মধ্যক শ্রেণী বা n/২ শ্রেণী বা n/২ থেকে ছোট শ্রেণীর পরের শ্রেণীর গনসংখ্যা।
Fc= n/২ এর মান থেকে ছোট ক্রমযোজিত গনসংখ্যার শেষ শ্রেণী বা মধ্যক শ্রেণীর আগের শ্রেণীর ক্রমযোজিত গণসংখ্যা।
L= মধ্যক শ্রেণী বা fm গণসংখ্যা বিশিষ্ট শ্রেণীতে থাকা শ্রেণী ব্যপ্তির সর্ব নিম্ন সংখ্যা।
h=মধ্যক শ্রেণির(শ্রেণী ব্যপ্তির বড় সংখ্যা-ছোট সংখ্যা)+১


সমাধানঃ

প্রদত্ত তথ্য হতে মধ্যক নির্ণয়ের জন্যে ক্রমযোজিত গবসংখ্যা সারণি তৈরি করি-

প্রাপ্ত নম্বর গনসংখ্যা (f) ক্রমযোজিত গণসংখ্যা (F)
৪১-৫০
৫১-৬০ ৩(Fc)
৬১(L)-৭০ ৩(fm)
৭১-৮০
৮১-৯০ ১০
n=১০

এখানে গণসংখ্যা n=১০ যা জোড় যা ২ দ্বারা বিভাজ্য
এখন, n/২ = ১০/২ = ৫
সারণিতে ৫ তম পদ ক্রমযোজিত গণসংখ্যায় মান ৬ এর মাঝে অবস্থান করতে পারে যা ৬১-৭০ শ্রেণীতে অবস্থিত
অতএব, ৬১-৭০ হবে মধ্যক শ্রেণী
এখানে চলকের মান, L=৬১, n=১০, Fc=৩, h=(৭০-৬১)+১=৯+১=১০, fm=৩
অতএব, মধ্যক=L+(n/২-Fc)h/fm
= ৬১+(১০/২-৩)১০/৩
= ৬১+(৫-৩)৩.৩৩
= ৬১+(২)৩.৩৩
= ৬১+৬.৬৬
= ৬৭.৬৬



আমরা ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম শ্রেণীতে ভাগ করার মধ্য দিয়ে মধ্যক সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা পেয়েছি। ৬ষ্ঠ শ্রেণী, ৭ম শ্রেণী এবং ৮ম শ্রেণীতে পরিসংখ্যান তথা তথ্য উপাত্ত সম্পর্কে অনেকটা ধারনা পেয়েছি। ৯ম শ্রেণী, ১০ম শ্রেণী, ১১ - ১২ বা একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীতে মধ্যক নির্ণয়ের অনেকটা ধারনার্জন করতে পেরেছি। অনার্স ও মাস্টার্সে সেই ধারার পূর্ণাঙ্গ ধারনার্জনের পাশাপাশি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে শিখেছি। আমরা সকলেরি মধ্যমণি হতে চাই। এখানেই মধ্যক নির্ণয়ের সার্থকতা। আশাকরি আজকের বিস্তারিত আলোচনা সহজ ভাবে সকলে মধ্যক সম্পর্কে ধারনার্জন করতে সাহায্য করবে।


সমস্যা হলে কমেন্ট করে জানাবেন।


শুভকামনায়----
কে-মাহমুদ
১৭-০৬-২১

6 comments

70 বিজোয় সংখ্যা মধ্যেক কত

১ থেকে ৭০ পর্যন্ত বিজোড় সংখ্যার মধ্যক ৩৫,
কারোন ১,৩,৫,৭ এভাবে ৬৯ পর্যন্ত সাজালে মাঝে যে সংখ্যা দাঁড়ায় সেটা ৩৫,সে কারনে মধ্যক ৩৫.

1timeschool.com এর পক্ষে,
রোদেলা

২০০ মধ্যক কত

১ থেকে ২০০ পর্যন্ত সংখ্যার মধ্যক ১০০.৫০


1timeschool.com এর পক্ষে,
রোদেলা

ওয়েলকাম
আমাদের সাথেই থাকুন---

1timeschool.com
এর পক্ষে,
রোদেলা

নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon