শুক্রবার

দৈর্ঘ্য পরিমাপের পদ্ধতি

জমির পরিমাপ, নকশা বা হিসাব নিকাশে, দৈর্ঘ্য প্রস্থ পরিমাপের মাধ্যমে ক্ষেত্রফল নির্নয়ে পরিমাপের একক এবং পরিমাপের সূত্র ও পদ্ধতি খুবি গুরুত্বপূর্ণ। দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক মিটার সহ সকল পরিমাপের একক সম্পর্কে ধারনা থাকা তাই অতি আবশ্যক একটি বিষয়।



আমাদের আজকের আলোচনা পরিমাপের সূত্রে ব্যবহৃত একক সমূহ সহজে ও ছন্দে ছন্দে নিরূপণ ও দৈর্ঘ্য পরিমাপে তা ব্যবহারের কৌশল নিয়ে।


সহজ পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্য পরিমাপের সূত্র ও একক


দৈর্ঘ্য পরিমাপ পদ্ধতি, জমির নকশা পরিমাপে মিটার,ছন্দে ছন্দে পরিমাপের সূত্র
দৈর্ঘ্য পরিমাপ

পরিমাপের ধারনাঃ

প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ নকশার মাধ্যমে নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে পছন্দ করেছে। দালান কোঠার পরিমাপ, আসবাবপত্রের নকশা, জমির নকশা এমনকি শিল্প কর্মের নকশা ও বস্তুর পরিমাপের জন্য প্রয়োজন হয়েছে পরিমাপের এককের। পরিমাপের এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই দৈর্ঘ্য পরিমাপের নানারকম পদ্ধতির উৎপত্তি।


পরিমাপের এককঃ

পরিমাপের জন্য চাই নির্দৃষ্ট মানদন্ডের। আধুনিক কালে ব্যবহৃত কয়েকটি মান দন্ড হল, তরল পদার্থ পরিমাপের জন্য লিটার পদ্ধতি, ওজন পরিমাপের জন্য কিলোগ্রাম পদ্ধতি এবং দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য মিটার পদ্ধতি,ইত্যাদি। এগুলোকে পরিমাপের একক বলা হয়ে থাকে।


দৈর্ঘ্য পরিমাপের এককঃ

দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য নানা রকম একক রয়েছে। বর্তমান বিশ্বে বেশি ব্যবহৃত আধুনিক ও জনপ্রিয় একক হল মিটার। মিটার পদ্ধতিতে পরিমাপকে আরো সহজ ও দ্রুত হিসাব নিরূপণ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে সেগুলো হল:
  • ১. মিটার থেকে ছোট বস্তু পরিমাপ করতে-

মিলি মিটার, সেন্টি মিটার, ডেসি মিটার

  • ২. মিটারের সমান বস্তু পরিমাপের ক্ষেত্রে-

মিটার

  • ৩. মিটার থেকে বড় বস্তু পরিমাপ করতে-

ডেকা মিটার, হেক্টো মিটার, কিলো মিটার।


উপরের ভাগ সমূহ বোঝার জন্য আমরা এক টাকার নোট কে উদাহরন হসাবে তুলে ধরতে পারি। এক টাকার নোট কে যদি আরো ছোট ছোট ভাগে ভাগ করি তবে পঞ্চাস পয়সা পেয়ে থাকি, আরো ছোট করলে পাই পঁচিশ পয়সা।  আবার এক টাকার নোট কে বড় করলে আমরা পাই দুই টাকার নোট, আরো বড় করলে পাই পাঁচ টাকার নোট, এভাবে দশ টাকার নোট, বিশ টাকার নোট, পঞ্চাস টাকার নোট ভা আরো বড় কোন নোট। সেইরূপ দৈর্ঘ্য পরিমাপের ক্ষেত্রে একক হিসাবে মিটার কে ধরা হয় আর এর থেকে ছোট ভাবে পরিমাপের জন্য মিলি মিটার, সেন্টি মিটার ও ডেসি মিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে আর বড় ভাবে পরিমাপের জন্য ডেকা মিটার, হেক্টো মিটার ও কিলোমিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ধারনা গুলো ঠিক টাকার নোটের মতই। তবে টাকার নোটের মত মিটারের নোট গুলো অসংখ্য ভাবে ভাগ করা হয় নি এবং মিটারের নোট গুলোর একটি থেকে অপারটির পার্থক্য ১০ টাকা বা ১০ একক। ব্যপারটি নিম্নরূপ -

ছোট নোট সমূহঃ

মিটার থেকে ১০ একক কম  ডেসি মিটার
ডেসি মিটার থেকে ১০ একক কম সেন্টি মিটার
সেন্টি মিটার থেকে ১০ একক কম মিলি মিটার

বড় নোট সমূহঃ

মিটার থেকে ১০ একক বড় ডেকা মিটার
ডেকা মিটার থেকে ১০ একক বড় হেক্টো মিটার
হেক্টো মিটার থেকে ১০ একক বড় কিলো মিটার


ব্যপারটি মিটারের সাথে তুলনা করে নিচের ধারা অনুযায়ী তুলে ধরা হল-

১০০০ মিলি মিটার লাগে ১ মিটার হতে
১০০ সেন্টি মিটার লাগে ১ মিটার হতে
১০ ডেসি মিটার লাগে ১ মিটার হতে

১ মিটার --- পরিমাপের মূল একক

০.১ ডেকা মিটার হলে ১ মিটার হয়
০.০১ হেক্টো মিটার হলে ১ মিটার হয়
০.০০১ কিলো মিটার হলে ১ মিটার হয়


উপরে একটা বিষয় অনেকে বোঝে না সেটা হল ১০০ কিভাবে ১ থেকে ছোট হয় বা ০.০০১ কিভাবে ১ থেকে বড় হয়?  এটি আয়ত্তে আনতে আমরা সোনা রূপা ও পিতলের কথা ভাবতে পারি। ব্যপারটি এমন যে, ১০০০০০০০ টি পিতলের কলস = ১০০০০০ টি রূপার কলস = ১ টি সোনার কলস। এখানে যার মূল্য কম বা যা ছোট সেটি বেশি লাগে বা বড় সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে আর যা বড় বা যার মূল্য বেশি তা ছোট সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।


তাই মিটার থেকে ছোট একক গুলো হলো, মিলি মিটার,  সেন্টি মিটার ও ডেসি মিটার আর মিটার থেকে বড় একক গুলো হল ডেকা মিটার হেক্টো মিটার ও কিলো মিটার।


ছন্দে ছন্দে পরিমাপের এককঃ

নিচের ছন্দটি মুখস্থ করে নি-
"মিলি সেন্টি ডেসি মিটার,
ডেকা হেক্টো কিলো"

ছন্দের শব্দ গুলো পর পর সাজালে পাই-

মিলি
সেন্টি
ডেসি

মিটার ---+++ মূল বিন্দু

ডেকা
হেক্টো
কিলো

ছন্দটি মনে রাখলে খুব সহজেই আমরা একধরনের একক কে অন্য ধরনের এককে রূপান্তর করতে পারবো নিচের কৌশল প্রয়োগ করে।


পূর্বেই আমরা জেনেছি যে মিটারের উপরের একক গুলো মিটার থেকে ছোট তাই বড় সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং মিটারের নিচের একক গুলো মিটার থেকে বড় তাই ছোট সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অন্য দিকে এক একক থেকে অন্য এককের ১০ করে পার্থক্য। সুতারং এক একক কে অন্য এককে পরিবর্তনের জন্য আমরা ছোট একক গুলোকে গুন করে বৃদ্ধি আর বড় একক গুলোকে ভাগ করে কমিয়ে প্রকাশ করতে পারি। ব্যপারটি একটি উদাহরন দিলে আরো সহজ হবে। মনে করি ১ হেক্টো মিটার কে মিলি মিটারে প্রকাশ করব। এখন মিলি মিটারের অবস্থান হেক্টো মিটারের ৫ ঘর উপরে তাই মিলি মিটারের মূল্য কম এবং এটি বড় সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করতে হবে বলে গুন করে বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা আগেই জেনেছি এক ঘর থেকে অন্য ঘরের পার্থক্য ১০ গুন বেশি বা ১০ ভাগ কম। হেক্টো মিটার থেকে মিলি মিটারের অবস্থান ৫ ঘর উপরে আর বড় সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করতে হবে সুতারং ১ হেক্টো মিটারকে মিলি মিটারে প্রকাশ করতে গেলে ১ এর সাথে ৫টি ১০ বা ১০×১০×১০×১০×১০ বা ১০০০০০ গুন করতে হবে। সুতারং ১ হেক্টো মিটার = ১০০০০০ মিলি মিটার হবে (১×১০০০০০=১০০০০০)।


অন্য ভাবে আমরা যদি ১ মিলি মিটার কে হেক্টো মিটারে প্রকাশ করতে চাই তবে ১ কে ৫টি ১০ বা ১০×১০×১০×১০×১০ বা ১০০০০০ দ্বারা ভাগ করতে হবে যেহেতু হেক্টো মিটারের অবস্থান মিলি মিটারের নিচে এবং মিলি মিটার থেকে হেক্টো মিটারের মূল্য বেশি তাই ছোট সংখ্যা দ্বারা প্রকাশের জন্য ভাগ করতে হবে। সুতারং ১ মিলি মিটার = ০.০০০০১ হেক্টো মিটার হবে (১÷১০০০০০=০.০০০০১)।


উদাহরণ-১
*৫ ডেসি মিটার সমান কত ডেকা মিটার?
সমাধান-
১ ডেসি মিটার সমান ১÷১০০ বা ০.০১ ডেকা মিটার
অতএব, ৫ ডেসি মিটার সমান ৫×০.০১ ডেকা মিটার
= ০.০৫ ডেকা মিটার।


উদাহরণ-২
*১৫ কিলো মিটার সমান কত মিটার?
সমাধান-
১ কিলো মিটার সমান ১×১০০০ মিটার বা ১০০০ মিটার
সুতারং, ১৫ কিলো মিটার সমান ১৫×১০০০ মিটার
= ১৫০০০ মিটার



তো আজ এপর্যন্তই, আশা করি খুব দ্রুত নতুন কোন বিষয় নিয়ে হাজির হব। সকলের শুভকামনায়।

কে-মাহমুদ
৩-৯-২০২০


নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon