সোমবার

বিপ্রতীপ কোণ কাকে বলে - এর বৈশিষ্ট্য

বিপ্রতীপ কোণের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য


এখানে যা থাকছে---

  • বিপ্রতীপ কোণ কি বা কাকে বলে
  • বিপ্রতীপ কোণের সংজ্ঞা
  • বিপ্রতীপ কোণের বৈশিষ্ট্য
  • বিপ্রতীপ কোণ কেমন
  • বিপ্রতীপ কোণের মান নির্ণয়


বিপ্রতীপ কোণ কি, বিপ্রতীপ কোণ কাকে বলে, বিপ্রতীপ কোণের সংজ্ঞা, বিপ্রতীপ কোণের বৈশিষ্ট্য, বিপ্রতীপ কোণ কেমন, বিপ্রতীপ কোণের মান নির্ণয়
বিপ্রতীপ কোণ

গণিতের জ্যামিতি শাখায় ভালো করতে এর মৌলিক বিষয় গুলো সম্পর্কে জানা আবশ্যক। জ্যামিতি তথা পরিমাপ পদ্ধতিতে কোণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে কোণ রয়েছে। কোণ সম্পর্কে সঠিক ধারনার্জন করতে এর প্রকারভেদ গুলো সম্পর্কে ধারনার্জন প্রয়োজন। কোণের প্রকারভেদ গুলোর মধ্যে বিপ্রতীপ কোণ জ্যামিতি শাখার খুবি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। সম্পদ্যে ও উপপাদ্যে তথা জ্যামিতিক চিত্রাঙ্কন ও প্রমাণে বিপ্রতীপ কোণের ভূমিকা ব্যপক। আমাদের আজকের আলচ্য বিষয় বিপ্রতীপ কোণ কি, কাকে বলে, বিপ্রতীপ কোণের সংজ্ঞা, এর বৈশিষ্ট্য, মান নির্ণয় সহ বিস্তারিত।



বিপ্রতীপ কোণের উৎপত্তিঃ

'বিপরীত' শব্দ থেকে 'বিপ্রতীপ' শব্দের উৎপত্তি। ইংরেজী 'Opposite' শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ বিপরীত। সহজ ভাবে বলতে গেলে বিপরীত বলতে উল্টা বা উল্টো দিক কে বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে, পশ্চিম দিকের বিপরীত পূর্ব দিক বা উত্তর দিকের বিপরীত দক্ষিণ দিক বা সাদার বিপরীত কালো বা বাম দিকের বিপরীত ডান দিক বা ভালো এর বিপরীত মন্দ। সুতারং বিপ্রতীপ বলতে বিপরীত বা উল্টো দিক কে বোঝানো হয়ে থাকে এবং বিপরীত কোণ থেকে বিপ্রতীপ কোণের উৎপত্তি হয়েছে।



বিপ্রতীপ কোণ কি বা কাকে বলেঃ

বিপ্রতীপ কোণের সংজ্ঞা বা বিপ্রতীপ কোণ কি বা কাকে বলে সেটা জানার আগে বিপরীত কোণ সম্পর্কে জানা আবশ্যক। একটি কোণের উল্টো দিকে থাকা কোণ কে বিপরীত কোণ বলে। অন্য দিকে একটি সরল রশ্মির প্রান্ত বিন্দুতে অপর একটি রশ্মির প্রান্ত বিন্দু মিলিত হলে কোণের উৎপত্তি ঘটে। সুতারং বিপ্রতীপ কোণ হতে দুটি সরলরেখা বা রশ্মির প্রয়োজন হয়। একটি সরলরেখাকে অপর একটি সরলরেখা ছেদ করলে, ছেদ বিন্দুতে যে চারিটি কোণ উৎপন্ন হয় তাদের একটির বিপরীত দিকে থাকা কোণ কে অপরটির বিপ্রতীপ কোণ বলে। সহজ ভাবে বলতে গেলে, একটি সরলরেখা কে অপর একটি সরলরেখা ছেদ করলে যে চারটি কোণ উৎপন্ন হয় তাদের একটির বিপ্রতীপ অপরটি। অন্য ভাবে বলতে গেলে, দুটি সরলরেখা কোনো এক বিন্দুতে ছেদ করলে যে চারটি কোণ উৎপন্ন হয় তাদের একটি অপরটির বিপ্রতীপ কোণ।



বিপরীত কোণ ও বিপ্রতীপ কোণের পার্থক্যঃ

  • ১. দুটি কোণ বিচ্ছিন্ন বা অবিচ্ছিন্ন যে কোনো ভাবে বিপরীত বা সামনাসামনি বসলে কোণ দুটিকে বিপরীত কোণ বলা যেতে পারে, কিন্তু বিপ্রতীপ কোণ  বিচ্ছিন্ন হতে পারে না, যদিও একিটির উল্টো দিকে অপরটি অবস্থান করে তবে, কোণ দুটির শীর্ষ বিদু একটি থাকে এবং কোণ দুটি উৎপন্ন হয় কেবল দুটি সরলরেখার সাহায্যে। 
  • ২. দুটি বিপরীত কোণের প্রতিটিতে দুটি করে মোট চারটি রশ্মির প্রয়োজন হয় এবং রশ্মি গুলোর প্রান্ত বিন্দু মিলিত হয়ে কোনো সরলরেখার সৃষ্টি করে না, কিন্তু দুটি বিপ্রতীপ কোণে দুটি করে মোট চারটি রশ্মি থাকে, রশ্মি গুলোর প্রান্ত বিন্দু গুলোর মিলিত রূপ দুটি সরল রেখার সৃষ্টি করে।
  • ৩. বিপরীত কোণ যে কোনো ভাবে যে কোনো ক্ষেত্রে তথা ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বহুভুজ এর অভ্যান্তরে সৃষ্টি হতে পারে তবে বিপ্রতীপ কোণ সৃষ্টি হয় শুধুমাত্র ক্ষেত্রের দুটি বাহু বা সরলরেখার সাহায্যে এবং বিপ্রতীপ কোণের একটি কোনো ক্ষেত্রের ভিতরে সৃষ্টি হলে অপরটি ক্ষেত্রটির বাইরে সৃষ্টি হয়।



বিপ্রতীপ কোণের বৈশিষ্ট্যঃ

বিপ্রতীপ কোণ সমূহ পরস্পর কেমন সেটা জানতে এদের বৈশিষ্ট্য জানা আবশ্যক। নিম্নে বিপ্রতীপ কোণের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-

  • ১. দুটি সরলরেখা একে অপরকে ছেদ করলে বিপ্রতীপ কোণ উৎপন্ন হয়।
  • ২. বিপ্রতীপ কোণ গুলো পরস্পর সমান হয় এবং এদের পরিমাপ সর্বদা সমান থাকে।
  • ৩. বিপ্রতীপ কোণের একটিকে যতো পরিমাণ ছোট বা বড় করা হবে, অপরটি ও ততো পরিমাণ ছোট বা বড় হবে।
  • ৪. বিপ্রতীপ কোণ দুটির শীর্ষ বিন্দু সাধারণ বা একি হয়।
  • ৫. ৩০ ডিগ্রি কোণের বিপ্রতীপ কোণ ৩০ ডিগ্রি হয়, ৪৫ ডিগ্রি কোণের বিপ্রতীপ কোণ ৪৬ ডিগ্রি হয়, ৬০ ডিগ্রি কোণের বিপ্রতীপ কোণ ৬০ ডিগ্রি হয়, ৯০ ডিগ্রি কোণের বিপ্রতীপ কোণ ৯০ ডিগ্রি হয়, অর্থাৎ পরিমাপ সর্বদা সমান হয়।
  • ৬. যদি কোনো বিপ্রতীপ কোণ জোড়ার সমষ্টি বা যোগফল ১৮০º হয় তবে এদের প্রত্যেকটি এক সমকোণ বা ৯০º এর সমান হয়।
  • ৭. যদি কোনো বিপ্রতীপ কোণ জোড়ার যে কোনোটি সমকোণ বা ৯০º হয় তবে অপরটিও সমকোণ বা ৯০º হয় এবং যে দুটি সরলরেখা দ্বারা বিপ্রতীপ কোণ সৃষ্টি হয় সেই সরলরেখা দুটির একটি অপরটি কে লম্ব বা খাড়া ভাবে ছেদ করে এবং উৎপন্ন কোণের প্রত্যেকটি কে Vertical Opposite Angle বা উলম্ব বিপ্রতীপ কোণ বলে।
  • ৮. বিপ্রতীপ কোণ জোড়ার প্রত্যকটি ছেদকের উভয় পাশে অবস্থান করে।
  • ৯. দুটি সরলরেখা পরস্পরকে ছেদ করলে ছেদ বিন্দুতে ২ জোড়া বিপ্রতীপ কোণের সৃষ্টি হয় এবং এক জোড়ার যোগফল ১৮০º থেকে ছোট হলে অপর জোড়া ১৮০º থেকে বড় হয়।
  • ১০. বিপ্রতীপ কোণ জোড়ার যে কোনো একটি কোণের সমদ্বিখণ্ডক রেখা অপরটিকেও সমদ্বিখন্ডিত করে।



চিত্রাকারে বিপ্রতীপ কোণঃ

নিম্নে চিত্রাকারে বিপ্রতীপ কোণ সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-


বিপ্রতীপ কোণ কি, বিপ্রতীপ কোণ কাকে বলে, বিপ্রতীপ কোণের সংজ্ঞা, বিপ্রতীপ কোণের বৈশিষ্ট্য, বিপ্রতীপ কোণ কেমন, বিপ্রতীপ কোণের মান নির্ণয়
চিত্র- বিপ্রতীপ কোণ

চিত্রে, AB এবং CD দুটি রেখা পরস্পর O বিন্দুতে ছেদ করেছে। ছেদ বিন্দু O তে তাই চারটি কোণ উৎপন্ন হয়েছে। কোণ গুলো হলো, <AOC, <COB, <DOB এবং <AOD (কোণের চিহ্ন কে < চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়)। এখানে <AOC এর উলটো বা বিপরীত পাশে <DOB অবস্থিত। সুতারং যদি বলা হয় <AOC  এর বিপ্রতীপ কোণ কোনটি? তবে উত্তর হবে <DOB। আবার, যদি বলা হয় <DOB  এর বিপ্রতীপ কোণ কোনটি? তবে উত্তর হবে <AOC। অনুরূপ ভাবে <AOD এর উল্টো বা বিপরীত দিকে <COB বলে, যদি প্রশ্ন করা হয় <AOD  এর বিপ্রতীপ কোণ কোনটি? তবে উত্তর হবে <COB।   একই ভাবে, যদি প্রশ্ন করা হয় যে, <COB  এর বিপ্রতীপ কোণ কোনটি? তবে উত্তর হবে <AOD। আমরা আগেই জেনেছি যে বিপ্রতীপ কোণ গুলো পরস্পর সমান হয়। সুতারং <AOC এর বিপ্রতীপ <DOB বা, <DOB এর বিপ্রতীপ <AOC বলে, <AOC=<DOB বা, <DOB=<AOC হবে। একি ভাবে <AOD এর বিপ্রতীপ <COB বা, <COB এর বিপ্রতীপ <AOD বলে, <AOD=<COB বা, <COB=<AOD হবে। সুতারং যদি <AOC = ৬০ ডিগ্রি হয় তবে <DOB = ৬০ ডিগ্রি হবে। আবার, <AOD = ১২০ ডিগ্রি হলে <COB = ১২০ ডিগ্রি হবে। অর্থাৎ বিপ্রতীপ কোণের একটি যা হবে অপরটি তাই হবে। একটি সুক্ষকোণ হলে অপরটিও সুক্ষকোণ হবে বা একটি স্থুলকোণ হলে অপরটিও স্থুলকোণ হবে। অর্থাৎ বিপ্রতীপ কোণ গুলো সর্বদা সমান হয়।




শুভকামনায়----
কে-মাহমুদ
২৮-০৬-২১

নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon