বুধবার

মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে - সূত্র ও নির্ণয় পদ্ধতি

মৌলিক সংখ্যা কি - মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র ও পদ্ধতি


এখানে যা থাকছে-

  • মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে
  • মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র
  • মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি
  • ইরাটোস্থিনিস ছাঁকনির সাহায্যে মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়


মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে, মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র, মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি, ইরাটোস্থিনিস ছাঁকনির সাহায্যে মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়
 মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের পদ্ধতি

সংখ্যা জগতে মৌলিক সংখ্যার ভূমিকা ব্যাপক ও বিস্তৃত। মৌল বা মৌলের ধারণা থেকে মৌলিক ধারনাটির উৎপত্তি ঘটেছে। আমাদের আজকের আলোচনা, মৌলিক সংখ্যা কি বা কাকে বলে, মৌলিক সংখ্যা চেনার উপায়, সূত্র, কৌশল বা পদ্ধতি নিয়ে।


মৌল বা মৌলিক ধারনাটি কি বা কাকে বলেঃ

মৌল বা মৌলিক বলতে সেই জিনিস কে বোঝায় যার মাঝে কোনো কিছুর ভাজ অর্থাৎ ভেজাল নেই বা সেই জিনিসের মাঝে সেই জিনিস ছাড়া অন্য কিছুর মিশ্রণ নেই। অর্থাৎ খাটি বা আসল বা নির্ভেজাল জিনিস কে মৌলিক জিনিস বলে। সুতারং মৌল বা মৌলিক হলো সেই জিনিস যাকে ভাঙলে বা বিশ্লেষণ করলে সেই জিনিস ছাড়া অন্য কোনো জিনিস পাওয়া যায় না। মৌল একক বা ক্ষুদ্রতম অংশ বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়। কোনো জিনিসের সবচেয়ে ছোট একক বা অংশ কেও মৌল বা মৌলিক জিনিস বলে। এক বস্তা ধান থেকে একটি ধান হচ্ছে সেই ধানের বস্তার মৌলিক ধান, এক থালা ভাতের একটি ভাত হচ্ছে সেই ভাতের থালার মৌলিক ভাত।


মৌলিক সংখ্যা চেনার আগে যা জানা প্রয়োজনঃ

  • উৎপাদক কি - কোনো সংখ্যাকে বিশ্লেষণ করলে বা ভাগ করলে যে সকল সংখ্যা পাওয়া যায় তাদের প্রতিটিকে সেই সংখ্যার উৎপাদক বলে। যেমন ১২ = ৬ x ২ বলে ৬ বা ২ প্রতিটি ১২ এর উৎপাদক।
  • মৌলিক উৎপাদক কি - আমরা আগেই জেনেছি যে উৎপাদক বলতে কোনো রাশি বা সংখ্যাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত বা বিশ্লেষণ করা বোঝায়। অপর দিকে মৌলিক উৎপাদক বলতে কোনো সংখ্যাকে সবচেয়ে ছোট বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিশ্লেষণ করলে যে সবচেয়ে ছোট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ পাওয়া যায় তাদের প্রত্যেকটি অংশকে বোঝায়। যেমন ১২ = ৩ x ২ x ২ বলে ৩, ২ বা ২ এর প্রতিটি ১২ এর মৌলিক উৎপাদক।
  • গুণনীয়ক কি - গণিতে গুণনীয়ক বলতে বা গুণনীয়ক সংখ্যা বলতে সেই সংখ্যা গুলোকে বোঝায় যে সংখ্যা গুলো গুণ করে মূল সংখ্যা বা অন্য কোনো সংখ্যা তৈরি করা হয়। ১ x ৫ x ২ = ১০ এখানে ১, ৫ এবং ২ গুণ করে ১০ সংখ্যা গঠণ হয়েছে বলে ১, ৫ এবং ২ এর প্রত্যেকে ১০ এর গুণনীয়ক সংখ্যা। গুণনীয়ক সংখ্যাকে আবার উৎপাদক সংখ্যা বলা যেতে পারে।
  • সকল সংখ্যার গুণনীয়ক - ১ দ্বারা কোনো সংখ্যাকে গুণ করলে সেই সংখ্যার মানের কোনো পরিবর্তন হয় না  অর্থাৎ সংখ্যার মান বাড়েও না আবার কমেও না বলে ১ কে সকল সংখ্যার একটি গুণনীয়ক বা উৎপাদক সংখ্যা ধরা হয়।
  • ক্রমিক সংখ্যা - দুটি সংখ্যার বিয়োগফল যদি ১ হয় অর্থাৎ দুটি সংখ্যার বড় সংখ্যা থেকে ছোট সংখ্যাটি বাদ দিলে বা বিয়োগ করলে যদি উত্তর ১ হয় তবে সংখ্যা দুটি কে ক্রমিক সংখ্যা বলে।


মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে এর সংজ্ঞাঃ

গণিতে কোনো সংখ্যাকে মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ করলে বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে বা বিভক্ত করলে যদি ১ এবং সেই সংখ্যা ছাড়া অন্যকোনো সংখ্যা বা উৎপাদক না পাওয়া যায় তখন সেই সংখ্যাকে মৌলিক সংখ্যা (Prime Number) বলে। অর্থাৎ কোনো সংখ্যার গুণনীয়ক সংখ্যা যদি ১ এবং সেই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা না হয় তবে সেই সংখ্যাকে মৌলিক সংখ্যা বলে। মৌলিক সংখ্যার গুণনীয়ক ১ এবং সেই সংখ্যা নিজে হওয়ায় মৌলিক সংখ্যার গুণনীয়ক সবসময় দু'টি হয়। ১ x ২ = ২, এখানে ২ এর গুণনীয়ক ১ ও ২ যা মাত্র দু'টি। ১ ও ২ এ দুটি সংখ্যা ছাড়া অন্য কিছু নেই বলে এবং গুণনীয়ক দুটির মাঝে মূল সংখ্যা ২ আছে বলে ২ একটি মৌলিক সংখ্যা। ১ x ৩ = ৩, এখানে ৩ এর গুণনীয়ক ১ ও ৩ যা মাত্র দু'টি সংখ্যা বা গুণনীয়ক এবং গুণনীয়ক দুটির মাঝে মূল সংখ্যা ৩ আছে বলে ৩ একটি মৌলিক সংখ্যা। ১ x ২ x ২ = ৪, এখানে ৪ এর গুণনীয়ক ১, ২ ও ২ যা দুটির বেশি সংখ্যা এবং গুণনীয়ক গুলোর মাঝে মূল সংখ্যা ৪ নেই বলে ৪ মৌলিক সংখ্যা নয়। ১ x ৫ = ৫ এখানে ৫ এর গুণনীয়ক ১ ও ৫ যা মাত্র দু'টি সংখ্যা বা গুণনীয়ক এবং গুণনীয়ক দুটির মাঝে মূল সংখ্যা ৫ আছে বলে ৫ একটি মৌলিক সংখ্যা। ১ x ২ x ৩ = ৬ এখানে ৬ এর গুণনীয়ক ১, ২ ও ৩ যা দুই এর বেশি এবং গুণনীয়ক দুটির মাঝে মূল সংখ্যা ৬ নেই বলে ৬ মৌলিক সংখ্যা নয়। এভাবে বিশ্লেষণ করে আমরা মৌলিক সংখ্যা সহজে চিনতে পারি, যাচাই করতে পারি বা নির্ণয় করতে পারি।

সুতারং আমরা এটা বলতে পারি যে,  কোন সংখ্যার উৎপাদক ১ এবং সেই সংখ্যা নিজে ছাড়া অন্য কোনো উৎপাদক না থাকলে সেই সংখ্যাকে মৌলিক সংখ্যা বলে।

সহজ ভাবে বলা যায়, যে সংখ্যাকে ১ এবং সেই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে।


মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র ও পদ্ধতিঃ

মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের মজার একটি সূত্র বা পদ্ধতি রয়েছে। পদ্ধতিটি খুবি সহজ যদিও সকল ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নয় তবুও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সূত্রটি কার্যকর হয়ে থাকে। বড় বড়ো সংখ্যা মৌলিক সংখ্যা কিনা সেটা যাচাই করতে বা বের করতে বা নির্ণয় করতে বা চিনতে মৌলিক সংখ্যা নির্বয়ের এই সূত্রটি খুবি ব্যবহার করা যায়।

মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্রটি হলো-
X-১৭=a.b
এখানে, a ও b দুটি ক্রমিক সংখ্যা এবং X যে সংখ্যাটি মৌলিক কি না যাচাই করতে হবে সেই সংখ্যা।

অর্থাৎ, (মৌলিক সংখ্যা -১৭) = দুটি ক্রমিক সংখ্যার গুণফল।

মনে রাখতে হবে যে, উপরের সূত্রটি যদি কোনো সংখ্যায় প্রয়োগ করা না যায় তবে সেই সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা নয়।

নিম্নে উদাহরণের সাহায্যে ব্যপারটি বোঝানো হলো।


  • #২৯ সংখ্যাটি মৌলিক কি না যাচাই-
এখানে, যাচাইকৃত সংখ্যা X=২৯
অতএব X-১৭ করে পাই, ২৯-১৭=১২
এবার ১২ সংখ্যাকে দুটি ক্রমিক সংখ্যার গুণফল আকারে প্রকাশ করার জন্য উৎপাদকে বিশ্লেষণ করে পাই, ১২=১x১২=১x৬x২=১x৩x২x২=(১x৩)x(২x২)=৩x৪

১২ এর দুটি উৎপাদক ৩ ও ৪ এবং ৩ ও ৪ দুটি ক্রমিক সংখ্যা।

অর্থাৎ X-১৭=a.b
বা, ২৯-১৭=৩.৪ এবং ৩ ও ৪ দুটি ক্রমিক সংখ্যা।

সুতারং, ২৯ সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা।


  • #২৫৭ সংখ্যাটি মৌলিক কি না যাচাই-
এখানে, যাচাইকৃত সংখ্যা X=২৫৭
অতএব X-১৭ করে পাই, ২৫৭-১৭=২৪০
এবার ২৪০ সংখ্যাকে দুটি ক্রমিক সংখ্যার গুণফল আকারে প্রকাশ করার জন্য উৎপাদকে বিশ্লেষণ করে পাই, ২৪০=১x২৪০=১x১২০x২=১x৬০x২x২=১x৩০x২x২x২=১x১৫x২x২x২x২=১x৫x৩x২x২x২x৩=(১x৫x৩)x(২x২x২x২)=১৫x১৬

২৪০ এর দুটি উৎপাদক ১৫ ও ১৬ এবং ১৫ ও ১৬ দুটি ক্রমিক সংখ্যা।

অর্থাৎ X-১৭=a.b
বা, ২৫৭-১৭=১৫.১৬ এবং ১৫ ও ১৬ দুটি ক্রমিক সংখ্যা।

সুতারং, ২৫৭ সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা।


মনেরাখতে হবে কোনো সংখ্যাকে X-১৭=a.b আকারে প্রকাশ করা গেলে সেটি মৌলিক সংখ্যা হবে এবং প্রকাশ করা না গেলে সেটি মৌলিক সংখ্যা হবে না।


[বিঃদ্রঃ সকল ক্ষেত্রে উপরের সূত্রের সাহায্যে মৌলিক সংখ্যা নির্ণয় করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৭৩৯ সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা কিনা যাচাই করলে যদিও সূত্রের সাহায্যে (১৭৩৯-১৭)=৪১.৪২ আকারে প্রকাশ করা যায় তবুও ১৭৩৯ সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা নয়, কারোন ১৭৩৯ সংখ্যাটি ৩৭ এবং ৪২ দিয়ে সম্পূর্ণ রূপে ভাগ করা যায় বা নিঃশেষে বিভাজ্য।]


মৌলিক সংখ্যার বৈশিষ্ট্যঃ

  • ১. মৌলিক সংখ্যাকে ভাগ করলে সর্বদা দুটি গুণনীয়ক পাওয়া যায় যার একটি ১ এবং অন্যটি সেই সংখ্যা নিজে। যেমন- ১৭=১৭x১
  • ২. কোনো সংখ্যা থেকে ১৭ বিয়োগ করে যদি দুটি ক্রমিক সংখ্যার গুণফল আকারে প্রকাশ করা যায় তবে সেটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৌলিক সংখ্যা হয়। যেমন- ১৮২৩ মৌলিক সংখ্যা কারোন, ১৮২৩-১৭=৪২.৪৩।
  • ৩. সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম বা ছোট মৌলিক সংখ্যা হচ্ছে ২।
  • ৪. ২ ছাড়া অন্য কোনো মৌলিক সংখ্যা নেই যা জোড়। সুতারং ২ একমাত্র জোড় মৌলিক সংখ্যা।
  • ৫. কোনো মৌলিক সংখ্যার গুণিতক বা নামতা সেই সংখ্যা ছাড়া এর অন্য গুণিতক গুলো কখনো মৌলিক সংখ্যা হতে পারে না। যেমন ২ এর গুণিতক গুলো হলো, ২x১=২, ২x২=৪, ২x৩=৬, ২x৪=৮, ২x৫=১০, ২x৬=১২, ২x৭=১৪,  ২x৮=১৬, ২x৯=১৮, ২x১০=২০, ২x১১=২২, ২x১২=২৪...... এরূপ অসংখ্য, তাই ২ ছাড়া ২ এর অন্য গুণিতক যেমন ৪, ৬, ৮, ১০, ১২, ১৪, ১৬, ১৮, ২০, ২২, ২৪, ২৬..... ইত্যাদি গুণিতক গুলো কখনো মৌলিক সংখ্যা হবে না।
  • ৬. কোনো সংখ্যা কে অন্য কোন মৌলিক সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যদি ভাগশেষ ০ হয় অর্থাৎ যদি পূর্ণভাবে ভাগ করা যায় বা যদি নিঃশেষে বিভাজ্য হয় তবে যেই সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা নয়। যেমন- ৭ একটি মৌলিক সংখ্যা, ৭ দ্বারা ৭০ কে ভাগ করলে ভাগফল হবে ১০ এবং ভাগশেষ কিছু থাকবে না বলে ভাগশেষ ০ হবে। যেহেতু ভাগশেষ ০ তাই ৭০ সংখ্যাটি কখনো মৌলিক সংখ্যা হতে পারে না।
  • ৭. ১ থেকে ১০ পর্যন্ত ৪ টি মৌলিক সংখ্যা আছে।
  • ৮. ১ থেকে ১০ পর্যন্ত মৌলিক সংখ্যা গুলো হলো, ২, ৩, ৫, এবং ৭।
  • ৯. ১ কখনো মৌলিক সংখ্যা নয় কারোন ১ সকল সংখ্যার বা যে কোনো সংখ্যার গুণনীয়ক বা উৎপাদক।
  • ১০. ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত ২৫ টি মৌলিক রয়েছে।
  • ১১. ০ কোনো সার্থক সংখ্যা নয় তাই এটি মৌলিক সংখ্যা নয়।
  • ১২. একমাত্র ২ ছাড়া বাকি মৌলিক সংখ্যা গুলো বিজোড়।
  • ১৩. সকল মৌলিক সংখ্যা স্বাভাবিক সংখ্যা।
  • ১৪. সংখ্যার শেষ নেই বলে মৌলিক সংখ্যার শেষ নেই। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যা হলো (2⁸²⁵⁸⁹⁹³³ - 1) যার অংক সংখ্যা ২৪৮৬২০৪৮২ টি যা ২০২১ সালে আবিষ্কৃত হয়।
  • ১৫. ৩ অপেক্ষা বড় যে কোনো মৌলিক সংখ্যার বর্গ বা স্কয়ার কে ১২ দিয়ে ভাগ করলে প্রতি ক্ষেত্রে ভাগশেষ ১ থাকে।
  • ১৬. ১ থেকে ২১০ পর্যন্ত ৪৬ টি মৌলিক সংখ্যা রয়েছে।

ইরাটোস্থিনিস ছাঁকনির সাহায্যে মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ঃ

ইরাটোস্থিনিস ছাকনির সাহায্যে খুব সহজেই মৌলিক সংখ্যা নির্ণয় করা যায়। যদিও পদ্ধতিটি বিশদ তবুও মৌলিক সংখ্যা সম্পর্কে ধারনা পেতে এবং সহজে মৌলিক সংখ্যা বের করতে ইরাটোস্থিনিস ছাকনি পদ্ধতি বেশ কার্যকর। নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা থেকে অন্য কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা পর্যন্ত মৌলিক সংখ্যা নিরূপণ করতে সাধারণত ইরাটোস্থিনিস ছাকনি পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। নিম্নে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যার মধ্যে মৌলিক সংখ্যা বের করতে ইরাটোস্থিনিস ছাঁকনি ব্যবহার ও প্রক্রিয়া ধাপ আকারে বিশ্লেষণ করা হলো।

নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করি-

মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে, মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র, মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি, ইরাটোস্থিনিস ছাঁকনির সাহায্যে মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়
ইরাটোস্থিনিস ছাঁকনি 


  • ১. চিত্রের মতো করে ঘর টানি এবং ঘরে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যা গুলো পর পর লিখে ঘর গুলো পূর্ণ করি। আমরা জানি যে ১ কোনো মৌলিক সংখ্যা নয় তাই প্রথম ঘরে থাকা ১ কে ক্রস চিহ্ন দিয়ে কেটে দিই।
  • ২. আমরা জানি সবচেয়ে ছোট মৌলিক সংখ্যা ২ সুতারং ছকে ২ কে টিক চিহ্ন দিয়ে রাখি এবং ২ এর ঘরের নামতা পড়তে থাকি এবং প্রাপ্ত গুণফল গুলো ছক থেকে ক্রস দিতে থাকি। অর্থাৎ ২ এর ঘরের নামতা ২x১=২, ২x২=৪, ২x৩=৬, ২x৪=৮, ২x৫=১০, ২x৬=১২, ২x৭=১৪,  ২x৮=১৬, ২x৯=১৮, ২x১০=২০, ২x১১=২২, ২x১২=২৪, ২x১৩=২৬....N বা অসংখ্য, এভাবে পড়তে থাকি এবং গুণফল থেকে ২ বাদে অন্য সকল গুণফল ৪, ৬, ৮, ১০, ১২, ১৪, ১৬, ১৮, ২০, ২২, ২৪, ২৬...... অসংখ্য, ছক থেকে ক্রস দিতে থাকি বা কাটতে থাকি।
  • ৩. এবার ২ এর ঘরের নামতা পড়ে ক্রস চিহ্ন দেওয়ার পর দেখা যায় যে ২ এর পরের ঘরটিতে ক্রস চিহ্ন পড়ে নি এবং এই ঘরে আছে ৩, অর্থাৎ ৩ একটি মৌলিক সংখ্যা ফলে ৩ এর ঘরে টিক চিহ্ন দিই। এবার আগের নিয়মে ৩ এর ঘরের নামতা পড়তে থাকি বা ৩ এর গুণ করতে থাকি এবং ৩ বাদে প্রাপ্ত গুণফল গুলো পরপর ছক থেকে ক্রস চিহ্ন বা গুণ চিহ্ন দিয়ে কাটতে থাকি।
  • ৪. এবার ৩ এর ঘরের নামতা পড়ে ক্রস চিহ্ন দেওয়ার পর দেখা যায় যে ৩ এর পরে ৫ এর ঘরটিতে ক্রস চিহ্ন পড়ে নি অর্থাৎ ৫ একটি মৌলিক সংখ্যা ফলে ৫ এর ঘরে টিক চিহ্ন দিই। এবার আগের নিয়মে ৫ এর ঘরের নামতা পড়তে থাকি বা ৫ এর গুণ করতে থাকি এবং ৫ বাদে প্রাপ্ত গুণফল গুলো পরপর ছক থেকে ক্রস চিহ্ন বা গুণ চিহ্ন দিয়ে কাটতে থাকি।
  • ৫. এবার ৫ এর ঘরের নামতা পড়ে ক্রস চিহ্ন দেওয়ার পর দেখা যায় যে ৫ এর পরে ৭ এর ঘরটিতে ক্রস চিহ্ন পড়ে নি অর্থাৎ ৭ একটি মৌলিক সংখ্যা ফলে ৭ এর ঘরে টিক চিহ্ন দিই। এবার আগের নিয়মে ৭ এর ঘরের নামতা পড়তে থাকি বা ৭ এর গুণ করতে থাকি এবং ৭ বাদে প্রাপ্ত গুণফল গুলো পরপর ছক থেকে ক্রস চিহ্ন বা গুণ চিহ্ন দিয়ে কাটতে থাকি।
  • ৬. এবার ৭ এর ঘরের নামতা পড়ে ক্রস চিহ্ন দেওয়ার পর দেখা যায় যে ৭ এর পরে ১১ এর ঘরটিতে ক্রস চিহ্ন পড়ে নি অর্থাৎ ১১ একটি মৌলিক সংখ্যা ফলে ১১ এর ঘরে টিক চিহ্ন দিই। এবার আগের নিয়মে ১১ এর ঘরের নামতা পড়তে থাকি বা ১১ এর গুণ করতে থাকি এবং ১১ বাদে প্রাপ্ত গুণফল গুলো পরপর ছক থেকে ক্রস চিহ্ন বা গুণ চিহ্ন দিয়ে কাটতে থাকি।
  • ৭. এবার ১১ এর ঘরের নামতা পড়ে ক্রস চিহ্ন দেওয়ার পর দেখা যায় যে ১১ এর পরে ১৩ এর ঘরটিতে ক্রস চিহ্ন পড়ে নি অর্থাৎ ১৩ একটি মৌলিক সংখ্যা ফলে ১৩ এর ঘরে টিক চিহ্ন দিই। এবার আগের নিয়মে ১৩ এর ঘরের নামতা পড়তে থাকি বা ১৩ এর গুণ করতে থাকি এবং ১৩ বাদে প্রাপ্ত গুণফল গুলো পরপর ছক থেকে ক্রস চিহ্ন বা গুণ চিহ্ন দিয়ে কাটতে থাকি।
  • ৮. উপরের নিয়ম অনুসরণ করতে থাকি যতক্ষণ পর্যন্ত ঘর ফাকা বা খালি থাকছে।
  • ৯. সকল ঘর টিক চিহ্ন বা ক্রস বা গুণ চিহ্ন দিয়ে ভরাট হয়ে গেলে যে ঘর গুলোতে টিক চিহ্ন পড়েছে সেই ঘর গুলোতে থাকা সংখ্যা গুলো হবে নির্ণেয় মৌলিক সংখ্যা।

উপরোক্ত নিয়মে ইরাটোস্থিনিস ছাঁকনির সাহায্যে ছক আকারে মৌলিক সংখ্যা চিহ্নিত করা যায়, যদিও ইরাটোস্থিনিস ছাঁকনি পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ একটি পদ্ধতি।


আশাকরি মৌলিক সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। এই আরটিকেল টি আপনাদের ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট করুন।

নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon