শনিবার

গরুর ওজন মাপার নিয়ম ও সহজ পদ্ধতি

ফিতা দিয়ে গরুর ওজন মাপার সূত্র ও এপস


এখানে যা থাকছে---

  • গরুর ওজন মাপার সূত্র
  • ফিতা দিয়ে গরুর ওজন মাপার পদ্ধতি
  • গরুর ওজন মাপার সহজ নিয়ম
  • গরুর ওজন ও মাংসের পরিমাণ নির্ণয়
  • গরুর ওজন মাপার এপস

গরুর ওজন মাপার সূত্র, ফিতা দিয়ে গরুর ওজন মাপার পদ্ধতি, গরুর ওজন মাপার সহজ নিয়ম, গরুর ওজন ও মাংসের পরিমাণ নির্ণয়, গরুর ওজন মাপার এপস
গরুর ওজন মাপার পদ্ধতি


আধুনিক পদ্ধতিতে গরু পালন করতে নিয়মিত গরুর ওজন বা ওয়েট মাপার গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়মিত গরুর ওজন মাপা ও তা লিখে রাখার মাধ্যমে গরুর দৈহিক বৃদ্ধি সম্পর্কে জানা যায়। বছুরের দৈহিক বৃদ্ধি জানার মাধ্যমে বাছুরের দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়। দুগ্ধবতী গাভীর নিয়মিত ওজন মাপার মাধ্যমে দুধ উৎপাদন হার সঠিক রেখে খাদ্যের অপচয় রোধ করা যায়। অপর দিকে গরু মোটাতাজাকরণে নিয়মিত গরুর লাইভ ওয়েট বা ওজন মাপার মাধ্যমে দৈহিক বৃদ্ধির হার জানা যায় এবং সে অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ করা যায়। তাই খামারে খাদ্যের অপচয় রোধ করে বাছুর, গাভী বা যে কোনো গরু থেকে মুনাফার্জনে নিয়মিত গরুর ওজন মাপা আবশ্যক। গরুর ওজন মাপার জন্য অনেকে মেশিন ক্রয় করে থাকেন। কিন্তু একটু মেধা খাটালে সহজেই গরুর ওজন পরিমাপ করা সম্ভব। সকলেই সুবিধার্থে আমাদের আজকের আলোচনা, গরুর ওজন মাপার সহজ পদ্ধতি, গরুর ওজন মাপার সঠিক নিয়ম ও গরুর ওজন মাপার এপস বা এপ্লিকেশন নিয়ে।



ফিতা দিয়ে গরুর ওজন মাপতে করণীয়ঃ

ফিতা দিয়ে যে কোনো গরুর ওজন মাপতে একটা লম্বা ফিতা নিতে হবে। গরুকে সোজা করে দাড় করিয়ে সর্বপ্রথম গরুর লেজের গোড়া থেকে সিনা বরাবর সামনের পা এর কোটি এর হাড় পর্যন্ত দূরত্ব বা দৈর্ঘ্য কত ইঞ্চি সেটা মেপে নিতে হবে। এর পর গরুর সামনের পা এর ঠিক পিছন দিয়ে পেট এর বেড় এর দৈর্ঘ্য কত ইঞ্চি তা মেপে নিতে হবে। অর্থাৎ গরুর ওজন বের করতে গরুর ২ স্থানের দৈর্ঘের মাপ নিতে হবে-
  • ১. সামনের পা এর কোটি থেকে পিছনের পা এর কোটি বা লেজের গোড়া পর্যন্ত দূরত্ব বা দৈর্ঘ্য।
  • ২. সামনের দুই পা এর ঠিক পিছন দিয়ে সম্পূর্ণ বুক বা পেট সহ পিঠের বেড়ের দৈর্ঘ্য বা বৃত্তাকার পেটের বেড় বা দৈর্ঘ্য। 
নিম্নে ফিতা বা স্কেল দিয়ে গরুর ওজন নির্ণয়ে যে দুই ধরণের মাপ নেওয়া প্রয়োজন গরুর শরীরে সেই মাপ নেওয়ার স্থান চিহ্নিত করে চিত্রাকারে দেখানো হলো-
গরুর ওজন মাপার সূত্র, ফিতা দিয়ে গরুর ওজন মাপার পদ্ধতি, গরুর ওজন মাপার সহজ নিয়ম, গরুর ওজন ও মাংসের পরিমাণ নির্ণয়, গরুর ওজন মাপার এপস
ফিতা দিয়ে গরুর ওজন পরিমাপ



গরুর ওজন মাপার সূত্রঃ

গরুর সমগ্র শরীরের ওজন=(গরুর দৈর্ঘ্য × বুকের বেড়  × বুকের বেড়) ÷ ৬৬০


অর্থাৎ -
গরুর সমগ্র শরীরের ওজন=(গরুর সামনের পা থেকে পিছনের পা পর্যন্ত দূরত্ব  × বুক বা পেটের বেড়  × বুক বা পেটের বেড়) ÷ ৬৬০


অর্থাৎ -
গরুর সমগ্র শরীরের ওজন=(গরুর সামনের পা এর কোটি থেকে পিছনের পা এর কোটি পর্যন্ত দূরত্ব × বুক বা পেটের বেড়  × বুক বা পেটের বেড়) ÷ ৬৬০


অর্থাৎ -
গরুর সমগ্র শরীরের ওজন=(সামনের পায়ের কোটি থেকে পিছনের পায়ের কোটি বা লেজের গোড়া পর্যন্ত দূরত্ব × বুক বা পেটের বেড় × বুক বা পেটের বেড়) ÷ ৬৬০


অর্থাৎ -
গরুর সমগ্র শরীরের ওজন=গরুর সাননের পায়ের কোটি থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য এর সাথে গরুর বুকের বেড়ের দৈর্ঘ্য প্রথমে গুণ করে নিতে হবে, প্রাপ্ত গুণফলের সাথে পুনরায় গরুর বুকের বেড়ের দৈর্ঘ্য গুণ করে গুণফল বের করে নিতে হবে, সব শেষে প্রাপ্ত গুণফল কে ৬৬০ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যাবে গরুর মোট ওজন।


মনেরাখতে হবে গরুর ওজন নির্ণয় করতে, সূত্রে বুক বা পেটের বেড়ের পরিমাপ ২ বার গুণ করতে হয়।



ফিতা দিয়ে বাছুরের ওজন মাপার পিদ্ধতিঃ

পা, ভুড়ি, হাড়, মাংস সহ বাছুরের সমগ্র ওজন পরিমাপ করতে নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করতে হবে-
  • ১. বাছুর কে সোজা করে দাড় করাতে হবে।
  • ২. বাছুরের সামনের পায়ের কোটি থেকে পিছনের পায়ের কোটি বা লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য কত ইঞ্চি তা ফিতা বা স্কেল দিয়ে মেপে লিখে রাখতে হবে।
  • ৩. বাছুরের সামনের পায়ের ঠিক পিছন দিয়ে ফিতা ঢুকিয়ে বাছুরের পেট বা বুকের বেড়ের দৈর্ঘ্য কত ইঞ্চি তা মেপে লিখে রাখতে হবে।
  • ৪. লিখে রাখা পরিমাপ সূত্রে বসিয়ে বাছুরের মোট ওজন নির্ণয় করতে হবে, সূত্রটি হলো- (সামনের ও পিছনের পায়ের কোটি দ্বয়ের মধ্যকার দূরত্ব × বুকের বেড় × বুকের বেড়) ÷ ৬৬০ = বাছুরের মোট ওজন।
  • ৫. বাছুরের ওজন নির্ণয়ের সূত্র প্রয়োগ করতে ফিতায় ইঞ্চি তে পরিমাপ করতে হবে।



গাভীর দৈহিক ওজন মাপার পদ্ধতিঃ

ভুড়ি, হাড়, মাংস সহ সম্পূর্ণ গাভীর ওজন নির্ণয় করতে নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করতে হবে-
  • ১. গাভীকে সোজা করে দাড় করাতে হবে।
  • ২. গাভীর সামনের পায়ের কোটি থেকে পিছনের পায়ের কোটি বা লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য কত ইঞ্চি তা ফিতা দিয়ে মেপে লিখে রাখতে হবে।
  • ৩. গাভীর সামনের পায়ের ঠিক পিছন দিয়ে ফিতা ঢুকিয়ে বুকের বেড়ের দৈর্ঘ্য কত ইঞ্চি তা মেপে লিখে রাখতে হবে।
  • ৪. লিখে রাখা দৈর্ঘ্য দুটি সূত্রে বসিয়ে গাভীর মোট ওজন নির্ণয় করতে হবে, সূত্রটি হলো- (সামনের ও পিছনের পায়ের কোটি দুটির দূরত্ব বা দৈর্ঘ্য × গাভীর বুকের বেড় × গাভীর বুকের বেড়) ÷ ৬৬০ = গাভীর মোট ওজন।



ফিতা দিয়ে গরুর ওজন মাপার সূত্র, নিয়ম ও পদ্ধতিঃ

হাড়, ভুড়ি, মাংস সহ গরুর শরীরের সম্পূর্ণ ওজন নির্ণয় করতে নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করতে হবে-
  • ১. গরুকে শক্ত করে বেধে সোজা করে দাড় করাতে হবে।
  • ২. গরুর সামনের পায়ের কোটি থেকে পিছনের পায়ের কোটি বা লেজের গোড়া পর্যন্ত কত ইঞ্চি লম্বা তা ফিতা দিয়ে মেপে কোথাও লিখে রাখতে হবে।
  • ৩. গরুর সামনের পায়ের ঠিক পিছন দিয়ে ফিতা ঢুকিয়ে বুকের বেড়ের দৈর্ঘ্য কত ইঞ্চি তা পরিমাপ করে লিখে রাখতে হবে।
  • ৪. লিখে রাখা দৈর্ঘ্য দুটি সূত্রে বসিয়ে গরুর মোট ওজন পরিমাপ করতে হবে, সূত্রটি হলো- (গরুর সামনের ও পিছনের পায়ের কোটি দুটির দূরত্বের দৈর্ঘ্য × গরুর বুকের বেড় × গরুর বুকের বেড়) ÷ ৬৬০ = গরুর মোট ওজন।



উদাহরণের সাহায্যে গরুর মোট ওজন নির্ণয়ঃ

  • ১. মনে করি, একটি গরুর সামনের পা এর কোটি থেকে পিছনের পা এর কোটি বা লেজের গোড়া পর্যন্ত দূরত্ব ৪০ ইঞ্চি এবং সামনের পা দুটির ঠিক পিছন বরাবর গরুর বুকের বেড়ের দৈর্ঘ্য ৫০ ইঞ্চি।
  • ২. সূত্রে মাণ বসালে দাঁড়ায়,
গরুর-মোট-ওজন=(৪০×৫০×৫০)÷৬৬০
=(২০০০×৫০)÷৬৬০
=(১০০০০০)÷৬৬০
=১৫১.৫১৫১৫২
=১৫২ কেজি (প্রায়)
এখানে, দশমিকের পরের সংখ্যা বাদ দিয়ে দশমিকের আগের  সংখ্যার সাথে ১ যোগ করা হয়েছে, অর্থাৎ ১৫১+১=১৫২ কেজি করা হয়েছে।



গরুর শরীরে মাংসের পরিমাণ নির্ণয়ের সূত্র ও পদ্ধতিঃ

উপরের সূত্র প্রয়োগ করে সর্বপ্রথম গরুর মোট শরীরের বা বডির ওজন নির্ণয় করতে হবে। গরুর মোট শরীরের ওজন নির্ণয় করার পর নিচের সূত্র গুলো প্রয়োগ করে গরুর শরীরে থাকা ভূড়ি, গোবোর, চামড়া বাদে হাড় সহ গোস্ত বা মাংসের পরিমাণ নির্ণয় করা যাবে-
গরুর শরীরে মাংসের পরিমাণ =(গরুর মোট ওজন × ৫৫) ÷ ১০০
অর্থাৎ, গরুর মোট ওজনের ৫৫% মাংস থাকে।



গরুর ওজন মাপার এপস বা সফটওয়ারঃ

গরুর মোট ওজন ও গরুর শরীরে মাংসের পরিমাণ দ্রুত নির্ণয় করার অনেক মোবাইল এপস ও কম্পিউটার সফটওয়ার পাওয়া যায়। এন্ড্রয়েড ফোনের জন্য গরুর ওজন মাপার এপস বা এপেক ফাইল বা এপ্লিকেশন আপনার ফোনে ইনেস্টল করতে এখানে ক্লিক করুন>>>



আজ এ পর্যন্তই। আশাকরি উপরোক্ত পদ্ধতি ও সূত্র গুলো অনুসরণ করে আমরা সহজেই কোনো বাছুর, বকনা, গাভী, ষাঁড় বা যে কোনো গরুর ওজন দ্রুত বের করতে পারবো।


বুঝতে সমস্যা হলে নিচে কমেন্ট করুন। আমরা যতো দ্রুত সম্ভব আপনার কমেন্টের উত্তর দিতে চেষ্টা করবো।

নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon