মঙ্গলবার

কারবারি বাট্টা কি বা কাকে বলে - বিস্তারিত

কারবারি বাট্টা বলতে কি বোঝায় - কারবারি বাট্টার প্রকারভেদ


এখানে যা থাকছে---

  • কারবারি বাট্টা কি বা কাকে বলে
  • কারবারি বাট্টা বলতে কি বোঝায়
  • কারবারি বাট্টার উৎপত্তি
  • কারবারি বাট্টা হিসাব ভুক্তির নিয়ম
  • কারবারী বাট্টার প্রকারভেদ

কারবারি বাট্টা কি বা কাকে বলে, কারবারি বাট্টা বলতে কি বোঝায়, কারবারি বাট্টার উৎপত্তি, কারবারি বাট্টা হিসাব ভুক্তির নিয়ম, কারবারী বাট্টার প্রকারভেদ
কারবারী বাট্টা

কারবারি বাট্টা সম্পর্কে জানার আগে যা জানা প্রয়োজনঃ

পন্যের লিখিত মূল্য কি- কোনো পন্যের গায়ে থাকা পন্যের নির্ধারিত মূল্যকে সেই পন্যের লিখিত মূল্য বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ একটি শার্টের গায়ে শার্ট টির যে পরিমাণ মূল্য নির্ধারণ করা থাকে সেই মূল্যকে শার্টের লিখিত মূল্য বলা হয়ে থাকে।

পন্যের প্রকৃত মূল্য কি- প্রকৃত মূল্য কে পন্যের সঠিক মূল্য বলা হয়ে থাকে। কোনো পন্যের গায়ে যে পরিমাণ মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে সেই পরিমাণ মূল্য কে সেই পন্যের লিখিত মূল্য বপ্লা হয়ে থাকলেও প্রকৃত মূল্য বলতে সেই পন্যে যে দামে ক্রয় বা বিক্রয় হয়ে থাকে সেই মূল্য কেই বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোনো পন্যের লিখিত মূল্য যে পরিমাণ থাকে সেই মূল্যে পন্য ক্রয় বা বিক্রয় না করে যে মূল্যে পন্য ক্রয় বা বিক্রয় হয়ে থাকে সেই মূল্যকে ঐ পন্যের প্রকৃত মূল্য বলা হয়ে থাকে।



বাট্টা কিঃ

বাট্টা অর্থ ছাড়। বাট্টা কে অনেকে কমিশনের সাথে তুলনা করলেও বাট্টা কোনো কমিশন নয়। মূলত কোন নির্দিষ্ট অর্থের বা মূল্যের উপর ছাড় দেওয়া কে বাট্টা বলে। অর্থাৎ বাট্টা বলতে ক্রয় বা বিক্রয় মূল্যের উপর অথবা নগদ টাকার উপর ছাড় দেওয়া কে বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ এক কথায় বাট্টা শব্দের অর্থ ছাড়।



কারবারি বাট্টার উৎপত্তিঃ

কারবার বা ব্যবসা পরিচালনার জন্য পন্যের ক্রয় বিক্রয় করতে পন্যের নির্ধারিত বা লিখিত মূল্যের উপর ছাড় দেওয়ার বা ছাড় পাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো পন্যের ছাড় দেওয়া বা ছাড় পাওয়ার ধারণা থেকেই কারবারি বাট্টার উৎপত্তি ঘটেছে। মনে রাখতে হবে কারবারি বাট্টার শুধু মাত্র পন্য ক্রয় বিক্রয় অথবা পন্য ফেরত দেওয়ার সময় উৎপত্তি ঘটে। নগদ টাকার উপর যে পরিমাণ ছাড় পাওয়া বা দেওয়া হয় তাকে কারবারি বাট্টা বলে না।



কারবারি বাট্টা কি বা কারবারি বাট্টা কাকে বলেঃ

কারবারি বাট্টা বলতে কোনো পন্য ক্রয় বিক্রয়ে অথবা ক্রয় বা বিক্রয় কৃত পন্য ফেরত দেওয়ার সময় যে পরিমাণ অর্থ ছাড় দেওয়া হয় বা পাওয়া যায় সেই পরিমাণ অর্থ কে বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোনো পন্যের লিখিত মূল্যের উপর যে পরিমাণ ছাড়ে পন্যটি ক্রয়, বিক্রয় করা হয় বা পন্যটি ফেরত দেওয়ার বা ফেরত পাওয়ার সময় যে পরিমাণ অর্থ চাড় দেওয়া হয় বা পাওয়া যায় সেই পরিমাণ অর্থ কে কারবারি বাট্টা বলে। অর্থাৎ পন্যের লিখিত মূল্য থেকে যে পরিমাণ ছাড়ে পন্যের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয় সেই পরিমাণ ছাড় কে ঐ পন্যের কারবারি বাট্টা বলে। অর্থাৎ পন্যের লিখিত মূল্য বিয়োগ পন্যের প্রকৃত মূল্য সমান পন্যের কারবারি বাট্টা। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে একটি পন্যের লিখিত মূল্য ২০০ টাকা কিন্তু পন্যটির প্রকৃত মূল্য অর্থাৎ ক্রয় বা বিক্রয় মূল্য ১৮০ টাকা এ ক্ষেত্রে পন্যটির কারবারি বাট্টার পরিমাণ হবে ২০০-১৮০=২০ টাকা। সুতারং কোনো পন্যের লিখিত মূল্যের উপর যে হারে ছাড় দিয়ে পন্যটি ক্রয় বা বিক্রয় করা হয়ে থাকে সেই পরিমাণ অর্থ বা টাকা কে সেই পন্যের কারবারি বাট্টা বলে।



কারুবারি বাট্টার প্রকারভেদঃ

কারবারি বা কারবারী বাট্টা বা Mercantile Discount বা Commercial Discount বা Trade Discount কে সাধারন্ত দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা-

  • ১. ক্রয় বাট্টা
  • ২. বিক্রয় বাট্টা

কারবারি বাট্টা কি বা কাকে বলে, কারবারি বাট্টা বলতে কি বোঝায়, কারবারি বাট্টার উৎপত্তি, বিক্রয় বাট্টা কি, কারবারী বাট্টার প্রকারভেদ
বিক্রয় বাট্টা

কোনো পন্য ক্রয় করতে গেলে ক্রয় কৃত পন্যের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে যে পরিমাণ অর্থ ছাড় পাওয়া যায় সেই পরিমাণ অর্থ কে ক্রয় বাট্টা বলে।


কোনো পন্য বিক্রয় করতে গেলে বিক্রয় কৃত পন্যের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে যে পরিমাণ ছাড়ে বা কমে পন্যটি বিক্রয় করা হয় সেই পরিমাণ ছাড় কে বা সেই পরিমাণ অর্থ বা টাকা কে বিক্রয় বাট্টা বলে।



হিসাবে কারবারি বাট্টা নির্ধারণের ক্ষেত্র সমূহঃ

হিসাববিজ্ঞানে তথা হিসাবে যে সকল অংকে বা ক্ষেত্রে কারবারি বাট্টা ধরা হয়ে তাকে তা নিম্নরূপ-

  • ১. পন্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে (ক্রয় বই)
  • ২. পন্য বিক্রয়ে ক্ষেত্রে (বিক্রয় বই)
  • ৩. ক্রয় ফেরতের ক্ষেত্রে (ক্রয় ফেরত বই)
  • ৪. বিক্রয় ফেরতের ক্ষেত্রে (বিক্রয় ফেরত বই)
  • ৫. অন্যান্য ক্ষেত্রে



কারবারি বাট্টা জাবেদায় অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার কারণঃ

কারবারি বাট্টা জাবেদায় হিসাব ভুক্ত হয় না। যেহেতু একটি পন্যের প্রকৃত মূল্য কে সেই পন্যের সঠিক মূল্য 

ধরা হয়ে থাকে সেহেতু কোনো পন্যের মূল্য বলতে পন্যটির লিখিত মূল্য থেকে কারবারি বাট্টা বাদ যাওয়ার পর যে মূল্য থাকে তাকে বোঝানো হয়ে থাকে। তাই কারবারি বাট্টা পন্যের সঠিক মূল্যের বাইরের একটি অংশ। অর্থাৎ একটি পন্যের মূল্য ছিল ১০০০ টাকা, পন্যটি ৯৯০ টাকায় কেনা হলো, এ ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া গেল ১০ টাকা অর্থাৎ কারবারি বাট্টা ১০ টাকা, এই ১০ টাকা ছাড় বা বাট্টা  হিসাবের বই তে না লিখে পন্যটির প্রকৃত ক্রয় মূল্য ৯৯০ টাকা লিখি তবে সঠিক হিসাব লেখা হয়, কারণ পকেট থেকে ৯৯০ টাকায় ব্যয় হয়েছে ১০০০ টাকা ব্যয় হয় নি। সুতারং কোনো পন্যের লিখিত মূল্য থেকে কারবারি বাট্টা বাদ দেয়ার পর যে পরিমাণ অর্থ অবশিষ্ট থাকে সেই পরিমাণ অর্থ হিসাবের খাতায় বা বইয়ে লিলিবদ্ধ করি তবে বাড়তি হিসাব করা থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং এতে হিসাবের কোনো গড় মিল হয় না কারণ পন্যের প্রকৃত মূল্যই সেই পন্যের সঠিক ও আসল মূল্য। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে কেও ১০০ টাকার পন্য ৯০ টাকায় বিক্রি করে বলবে না যে সে পন্যটি ১০০ টাকায় পন্যটি বিক্রি করেছে বরং বলবে ৯০ টাকায় বিক্রি করেছে। তাই কোনো পন্য ক্রয় বা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সেই পন্যের লিখিত মূল্য ও সেই পন্যের কারবারি বাট্টা বা ছাড় হিসাব ভুক্ত না করে পন্যটির প্রকৃত মূল্য তথা সঠিক ক্রয় বা বিক্রয় মূল্য হিসাব ভূক্ত করলে বাড়তি হিসাব করে সময়ের অপচয় ও বাড়তি ঝামেলা থেকে মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পন্যটির সঠিক মূল্য হিসাব ভুক্ত করে সঠিক হিসাব নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। এ সকল কারণে কারবারি বাট্টা জাবেদায় তথা হিসাবে অন্তর্ভূত করা হয় না।



কারবারি বাট্টা সম্পর্কিত কিছু লেনদেন ও জাবেদাঃ

  • ১. রহিমের নিকট ১০% বাট্টায় ৫০০০ টাকার পন্য বিক্রয়।

প্রাপ্য/দেনাদার (রহিম) হিসাব- ডেবিট --৪৫০০/-

বিক্রয় হিসাব - ক্রেডিট ---৪৫০০/-


  • ২. রোদেলার নিকট থেকে ১০০ টাকা বাট্টায় ১০০০ টাকার পন্য ক্রয়।

ক্রয় হিসাব- ডেবিট - ৯০০/-

প্রদেয়/পাওনাদার(রোদেলা) হিসাব- ক্রেডিট - ৯০০/-


  • ৩. ৬০০০ টাকার পন্য নমুনামাফিক না হওয়ায় যব্বার কে ফেরত দেওয়া হলো, কারবারি বাট্টা ১০% ধরতে হবে।

প্রদেয়/পাওনাদার (যব্বার) হিসাব- ডেবিট-৫৪০০/-

ক্রয় ফেরত/বহি:ফেরত হিসাব--ক্রেডিট ---৫৪০০/-


  • ৪. রফিকের নিকট ১০% কারবারি বাট্টা বাদ দেওয়ার পর ৪৫০ টাকার পন্য বিক্রয়।

প্রাপ্য/দেবাদার (রফিক) হিসাব- ডেবিট - ৪৫০/-

বিক্রয় হিসাব - ক্রেডিট -- ৪৫০/-



ক্রয়, বিক্রয়, ক্রয় ফেরত ও বিক্রয় ফেরত বইতে কারবারি বাট্টা লিপিবদ্ধের নিয়মঃ

ক্রয় বই বিক্রয় বই, ক্রয় ফেরত বই, বিক্রয় ফেরত বই যেহেতু ক্রয়-বিক্রয় ও ক্রয় ফেরত বা বিক্রয় ফেরতের প্রকৃত মূল্যের পরিমাণ লিপিবদ্ধ করণের ও নির্ধারণের জন্য তৈরি করা হয় সেহেতু এসকল বই এ প্রকৃত পন্যের মূল্য নির্ধারণের জন্য পন্যের লিখিত মূল্য থেকে কারবারি বাট্টা বাদ দিয়ে তথা বিয়োগ করে প্রকৃত মূল্য বের করে দেখানো হয়ে থাকে। সুতারং ক্রয় বই বিক্রয় বই, ক্রয় ফেরত বই, বিক্রয় ফেরত বই এ কারবারি বাট্টা সবসময় বিয়োগ করা হয়।



উপরোক্ত আলোচনা থেকে আশাকরি কারবারি বাট্টা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানালে খুশি হবো। 

নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon