বৃহস্পতিবার

গরুর ক্ষুরা রোগ বা জরা - ওষুধ ও চিকিৎসা

গরুর ক্ষুরা রোগ ও গালে ঘা রোগের কারণ, ওষুধ ও টিকা


এখানে যা থাকছে---

  • গরুর খুরা রোগের ঔষধ ও চিকিৎসা
  • গরুর খুরা রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন
  • গরুর ক্ষুরা রোগের ঘরোয়া ও হোমিও চিকিৎসা

গরুর খুরা রোগের ঔষধ ও চিকিৎসা, গরুর খুরা রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন, গরুর ক্ষুরা রোগের ঘরোয়া ও হোমিও চিকিৎসা
গরুর ক্ষুরা রোগের ওষুধ ও চিকিৎসা

গরুর ক্ষুরা রোগ কেন হয়ঃ

গরুর খুরা রোগ বা ক্ষুরা রোগ কে অনেকে গরুর জরা রোগ বা গরু জরা বলে। গরু জরলে বা গরুর ক্ষুরা রোগ হলে সাধারণত গরুর ক্ষুর বা পায়ে ও গালে ক্ষত সৃষ্টি হয় এজন্য গরুর ক্ষুরা রোগ কে পায়ের পাতা বা ক্ষুর ও মুখের ক্ষত রোগ বা ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজ বা এফ.এম.ডি (Foot & Mouth Disease বা FMD) বলে। গরুর ক্ষুরা রোগ ব্যাকটেরিয়া ঘটিত মারাত্মক রোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম। ক্ষুরা রোগের জন্য দায়ি ভাইরাস গরুর দেহে প্রবেশের পর নানারকম লক্ষণ প্রকাশ পায়। বিশেষ করে গরুর পা ও মুখে ক্ষত দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ক্ষত দ্রুত বেড়ে যায় গরু খাবার গ্রহণে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং দূর্বল হয়ে একসময় মারা যায়। ক্ষুরা রোগ হলে গরুর মারাত্মক জ্বর দেখা দেয় তাই গরুর ক্ষুরা রোগ কে Aphthous fever নামে নামকরণ করা হয়ে থাকে। ক্ষুরা রোগ হলে হার্টের উপর ভাইরাসের ব্যপক ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে গরুর ক্ষুরা রোগ কে Tiger Heart Disease নামেও অভিহিত করা হয়।



গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ সমূহঃ

ক্ষুরা রোগের জন্য দায়ি ভাইরাস গরুর দেহে প্রবেশের পর গরুর দেহে যে সকল লক্ষণ দেখা দেয় তা নিম্নরূপ-

  • ১. পায়ের ক্ষুরের চারিদিকে ও ক্ষুরের মাঝে ক্ষত বা ঘা দেখা দেয়।
  • ২. দাতের মাড়ি, জিহ্বা ও সম্পূর্ণ মুখে ক্ষত বা ঘা সৃষ্টির ফলে গাল বা মুখ দিয়ে লালা পড়ে বা লালা ঝরে এবং গরুর মুখ বা গাল খাবার গ্রহণে অক্ষম হয়ে পড়ে।
  • ৩. পায়ে ক্ষতের ফলে গরু হাটাচলা করতে কষ্ট বোধ করে এবং খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে থাকে।
  • ৪. ক্ষুরা রোগ হলে গরুর শরীরের তাপমাত্রা মারাত্মক আকারে বেড়ে যায়।
  • ৫. গাভীর ওলানে ক্ষত বা ফোসকা দেখা দিতে পারে।
  • ৬. ক্ষুরা রোগের ফলে গর্ভবতী গাভীর গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে।
  • ৭. ক্ষুরা রোগের ফলে দুগ্ধবতী গাভীর দুধ উৎপাদন মারাত্মক আকারে কমে যায় বা হ্রাস পায়।
  • ৮. ক্ষুরা রোগের আক্রমণে বয়ষ্ক গরু ও বাছুর দ্রুত দূর্বল হয়ে পড়ে এবং মৃত্যু ঝুকি বেড়ে যায়।



গরুর ক্ষুরা রোগ হলে বা গরু জরলে করনীয়ঃ

  • ১. দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
  • ২. ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরু কে অন্যান্য সুস্থ গরু থেকে দ্রুত আলাদা করতে হবে।
  • ৩. ক্ষুরা রোগ হলে গরুর গালে ঘা থাকায় শক্ত খাবার ক্ষেতে পারে না তাই নরম, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ সুষম খাবার প্রদান করতে হবে।
  • ৪. গরুকে পূর্ণ বিশ্রাম দিতে হবে এবং শুষ্ক ও ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে, ভিজা ও কাদা মাটিতে বাধলে বা রাখলে গরুর পায়ের ক্ষত বেড়ে যেতে পারে।
  • ৫. গরুকে শুষ্ক ও আরাম দায়ক পরিবেশে রাখতে হবে, নিয়মিত রোগাক্রান্ত গরুর ওষুধ প্রয়োগ ও দেখা শোনা করতে হবে।



ক্ষুরা রোগের ভাইরাসের প্রজাতি সমূহঃ

গরুর খুরা রোগের ঔষধ ও চিকিৎসা, গরুর খুরা রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন, গরুর ক্ষুরা রোগের ঘরোয়া ও হোমিও চিকিৎসা
এফএমডি ভাইরাস

ক্ষুরা রোগের জন্য দায়ি ভাইরাসের অনেক গুলো প্রজাতি রয়েছে। দিন দিন এ প্রজাতি বা গ্রুপ বা সেরোটাইপ বা স্ট্রোনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে গরুকে ক্ষুরা রোগের টিকা দেওয়া সত্তেও অনেক সময় ক্ষুরা রোগের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে গরুকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। গরুর ক্ষুরারোগের জন্য দায়ি ভাইরাসের প্রজাতিসমূহ হচ্ছে, সেরোটাইপ -ও, সেরোটাইপ -এ, সেরোটাইপ -সি, স্যাট-১, স্যাট-২, স্যাট-৩, এশিয়া-১ ইত্যাদি।



গরুর ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন ও টিকা দেওয়ার নিয়মঃ

গরুর ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন বা গরুর ক্ষুরা রোগের টিকার নাম FMD Vaccine বা ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজ ভ্যাক্সিন। গরুকে ক্ষুরা রোগের টিকা বা ভ্যাকিসিন সাধারন্ত ৬ মাস অন্তর বছরে ২ বার দিতে হয়। পশু হাসপাতালে ও ওষুধের দোকানে ক্ষুরা রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন কিনতে পাওয়া যায়। সরকারি পশু হাসপাতালের চেয়ে ওষুধের দোকানে ভ্যাকসিনের দাম অনেকটা বেশি হয়ে থাকে। ৬ মাস বয়সের ছোট গরুকে ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া যায় না। বাছুরের ৬ মাস বয়স হলে ক্ষুরা রোগের প্রথম ডোজ দিতে হয়। ১ম ডোজ দেওয়ার পর প্রতি ৬ মাস অন্তর গরুকে ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হয়। অর্থাৎ বছরে দুই বার FMD টিকা দিতে হয়। গরুর ক্ষুরা রোগের টিকা দেওয়া খুবি সহজ। ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন গরুর মাংসপেশিতে প্রয়োগ করতে হয়। ভ্যাকসিন সাধারন্ত ঠান্ডা বা শীতল অবস্তায় সংরক্ষণ করতে হয়। গরুকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন সিরিঞ্জ জীবাণু মুক্ত হয় এবং  ভ্যাকসিন খোলার পর তা দ্রুত গরুর মাংশে পুশ বা ইঞ্জেকশন করা হয়।



গরুর ক্ষুরা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসাঃ

ক্ষুরা রোগ হলে নিম্নোক্ত ঘরোয়া চিকিৎসা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে প্রয়োগ করতে হবে-

  • ১. গরুর পা ও ক্ষুর, বাট এবং গাল হালকা গরম জল বা পানিতে সামান্য পটাশ (পটাশিয়াম পার ম্যাগনেট) মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার ধুইয়ে দিতে হবে।
  • ২. দিনে ২ বার ১০ গ্রাম বা দুই চা চামচ ফিটকিরি এক লিটার পানিতে মিশিয়ে সেই পানি বা জল দিয়ে মুখ বা গাল বা জিহ্বা ভালো ভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
  • ৩. সোহাগা কড়াইতে দিয়ে জ্বাল দিলে তা খই এর মত ফুটে উঠলে তা কড়াই থেকে নামিয়ে বেটে মিহি গুড়া করে গরুর গাল, পা ও ওলান বা বাটের ক্ষত স্থানে লাগাতে হবে।



গরুর ক্ষুরা রোগের হোমিও চিকিৎসাঃ

হোমিওপ্যাথিতে ভাইরাস ধ্বংস করার মতো কোনপ্রকার হোমিও ঔষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে গরুর ক্ষুরা রোগ হলে হোমিও ওষুধ হিসাবে ক্ষত বা ঘা শুকাতে হিপারসালফার -২০০ ও মার্কসল-২০০, জ্বর নিবারনের জন্য একোনাইট-৩x এবং ব্যথা কমাতে আর্নিকা-২০০ আধা ঘন্টা অন্তর পর্যায়ক্রমে খাওয়াতে হবে।



গরুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা বা এলোপ্যাথি চিকিৎসাঃ

  • ১. ওষুধ প্রয়োগের সময় খাবার সোডা এক লিটার জলে ৪০ গ্রাম মিশিয়ে গরুর পায়ের ক্ষত স্থানে লাগিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • ২. পা পরিষ্কার করার পর দ্রুত ঘা বা ক্ষত শুকাতে Sulfanilamide পাওডার গরুর পা বা ক্ষুরের মাঝের ক্ষত স্থানে ভালো করে লাগিয়ে দিতে হবে। Sulfanilamide powder এর পরিবর্তে Tetracycline powder অথবা উভয় ওষুধ এক সাথে নিয়মিত ৫-৭ দিন ব্যবহার করতে হবে।
  • ৩. গরু বা বাছুরের জ্বর কমাতে Paracitamol গ্রুপের ট্যাবলেট বা লিকুইড বা সিরাপ শরীরের তাপ কমা না পর্যন্ত খাওয়াতে হবে।
  • ৪. মাছির উপদ্রব হতে গরুর ঘা বা ক্ষত রক্ষা করতে হবে যাতে মাছি ডিম না পাড়ে, এ জন্য Sulfanilamide পাউডার ব্যবহারের সময় এতে কর্পূর মিশাতে হবে এবং এই মিশ্রণ ভ্যাসলিন অথবা নারিকেল তেল যোগে ক্ষত স্থানে নিয়মিত প্রয়োগ করতে হবে।
  • ৫. ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে থাকা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোধে এন্টি বায়োটিক ইঞ্জেকশন যেমন- StreptoPen ইঞ্জেকশন অথবা Penicillin ইঞ্জেকশন অথবা Oxytetracycline ইঞ্জেকশন প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশ মত ৩-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে।
  • ৬. গরুর মুখে, গালে, জিহ্বায় ও মাড়িতে সোহাগা ভেজে খৈ বানিয়ে তা গুড়া করে এর সাথে মধু মিশিয়ে ভালোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে এতে ব্যথা, ফোলা ও ক্ষত দ্রুত কমতে সহায়তা করবে।



গরুর ক্ষুরা রোগ পরবর্তী সমস্যাঃ

ক্ষুরা রোগ থেকে মুক্ত হলেও গরুর উৎপাদন কমে যায়, দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দগ্ধ খামার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বাছুরের ক্ষুরা রোগ পরবর্তী Tiger Heart Disease বা THD রোগ দেখা দেয়। THD রোগে বাছুরের মৃত্যু হতে পারে। ক্ষুরা রোগ থেকে রোগ মুক্ত হলেও গরু খাওয়া কমিয়ে দেয়, গরমে হাপায় ও মুখ দিয়ে লালা বা রস ছাড়ে, গায়ের পশম বা লোম বড় বড় হয়ে যায়, বিপাকীয় সমস্যা দেখা দেয় এবং গরু দিন দিন শুকিয়ে এক সময় মারা যায়। বয়ষ্ক গরু ক্ষুরারোগ থেকে মুক্ত হবার ১০-২০ দিন পরেও খাবার ক্ষেতে ক্ষেতে মারা যাওয়ার অনেক প্রমাণ রয়েছে। ক্ষুরা রোগে হার্টের ব্যপক ক্ষতি করায় গরুর এমন অপমৃত্যু হয়ে থাকে। গরু, গাভী বা বাছুর কে ক্ষুরারোগ পরবর্তী হার্ট এটাক থেকে রক্ষা করতে নিম্নের চিকিৎসা গ্রহণ করলে ক্ষুরারোগ পরবর্তী মৃত্যু ঝুকি কমানো সম্ভব হয়-

  • ১. ক্ষুরারোগ চিকিৎসা করার শেষ দিকে পূর্ণ বয়ষ্ক গরু বা গাভীকে পরপর ৩ দিন ১৫-২০ মিলি হারে Ciprofloxacilin vet ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করলে ক্ষুরারোগ সেরে যাওয়ার পর হার্ট এটাকে মৃত্যু ঝুকি কমানো সম্ভব।
  • ২. খামারের অন্য কোন গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলে অথবা পাশের বাড়ি বা গ্রামে কোন গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলে ছোট গরু বা বাছুর কে সুস্থ অবস্থায় Sulpher গ্রুপের ইঞ্জেকশন যেমন - Selidon vet ইঞ্জেকশন ২৫ সিসি পরিমাণ এক ডোজ করে রাখলে বাছুর পরে ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলেও মৃত্যু ঝুকি কমে যায়।



ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলে গরুর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ওষুধ ও চিকিৎসাঃ

গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলে খাদ্য খাবার খাওয়া কমিয়ে দেয় বা বন্ধ করে দেয়। রোগ মুক্ত হবার পর গরম সহ্য হয় না, দুপুর বেলা হাপিয়ে ওঠে, গায়ের পশম বা লোম বড় হয়ে যায়। এছাড়া গরু বিপাকীয় সমস্যায় ভোগে। দূর্বল হতে হতে গরুর দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়। দুধ, মাংস উৎপাদন কমতে কমতে একেবারে দুধ শূন্য হয়ে পড়ে। এসকল পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গরুর মাংস ও দুধ উৎপাদন ঠিক রাখতে নিম্নের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে-

  • ১. গরুর গায়ে জ্বর থাকলে জ্বর নিবারণ হওয়া না পর্যন্ত Paracitamol গ্রুপের ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে।
  • ২. গরুর খাদ্যের প্রতি রুচি বৃদ্ধির জন্য Ruchi Mix vet জাতীয় পাওডার ১০০-২০০ গ্রাম করে দিনে ২ বার ৭ দিন খাওয়াতে হবে।
  • ৩. শরীরের দূষন কমিয়ে রক্ত পরিষ্কার করতে Dexamethasone গ্রুপের স্ট্রয়েড ট্যাবলেট যেমন- Oradexon ট্যাবলেট অথবা Decason  ট্যাবলেট প্রথম ৩ দিন প্রতিবারে ৫ টি করে দিনে ৩ বার, পরবর্তী ৩ দিন প্রতিবারে ৪ টি করে দিনে ৩ বার, পরবর্তী ৩ দিন প্রতিবারে ৩ টি করে দিনে ৩ বার, পরবর্তী ৩ দিন প্রতিবারে ২ টি করে দিনে ৩ বার, পরবর্তী ২ দিন প্রতিবারে ১ টি করে দিনে ৩ বার, পরবর্তী ১ দিন প্রতিবারে ১ টি করে দিনে ২ বার, পরবর্তী ১ দিন প্রতিবারে ১ টি করে দিনে ১ বার খাওয়াতে হবে। স্ট্রয়েড গ্রুপের ওষুধ ধীরে ধীরে মাত্রা কমিয়ে শেষ করতে হয় বলে উপরের মাত্রা ধীরে ধীরে কমিয়ে শেষ করা হয়েছে।
  • ৪. জিংক সিরাপ বা লিকুইড যেমন - ZS vet সিরাপ ১০০-২০০ মিলি করে দিনে এক বার এভাবে ১০-১৫ দিন খাওতাতে হবে।



গরুর ক্ষুরা রোগ ছড়িয়ে মহামারি রূপ নেওয়ার কারণঃ

গরুর ক্ষুরারোগ সারা বছর দেখা দিলেও সাধারন্ত বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু করে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বেশি দেখা দিয়ে অনেক সময় মহামারি রূপ ধারণ করে। বয়ষ্ক গরুকে ক্ষুরা রোগের হাত থেকে সারিয়ে তোলা সম্ভব হলেও গরু খুব দূর্বল হয়ে পড়ে ফলে দীর্ঘ দিন অপুষ্টিতে ভোগে। ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গাভীর দুধ উৎপাদন মারাত্মক রূপে কমে যায়। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি এ সময়য়ে ছোট বাছুর অর্থাৎ ৬ মাসের কম বয়সী বাছুরের ক্ষুরা রোগ বেশি দেখা দেয় এবং এ সময়ে এ রোগ মহামারি বা মড়ক আকার ধারণ করে। ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত প্রায় ৯৫% বাছুর মারা যায় ফলে বাছুরের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। ক্ষুরা রোগে আক্রাত বাছুর শেষ পর্যায়ে হার্ট সমস্যায় ভোগে যাকে বাছুরের Tiger Heart disease বা THD রোগ বলা হয়ে থাকে। নিম্নে গরুর ক্ষুরারোগ মহামারী বা মড়কে রূপ নেওয়ার কিছু কারণ তুলে ধরা হল-

  • ১. বর্ষার মাঝে গরু কাদা যুক্ত স্থানে থাকায় গরু ক্ষুরা রোগের জন্য দায়ি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে শুরু করে, অন্যদিকে বর্ষার শেষ দিকে শীতের আগমনে  ক্ষুরা রোগ দ্বারা সৃষ্ট গরুর ক্ষত শুকাতে বিলম্বিত হয়  ফলে সুস্থ গরুতে দীর্ঘ দিন ধরে সংক্রমণের সুযোগ পায় ফলে ক্ষুরা রোগ মহামারি রূপ ধারণ করে।
  • ২. ক্ষুরা রোগ বা গরু জরলে রোগাক্রান্ত গরুর মুখের লালা, দুধ, ক্ষত থেকে বের হওয়া পুজ, রক্ত ও রস এবং গোবর এর সংস্পর্শে সুস্থ গরু এলে সহজেই ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হতে পারে, এভাবে খামার বা গোয়ালের সকল গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
  • ৩. ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরুর খাবারের মাধ্যমে বা গরুর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বায়ুতে ভাইরাস সহজে ছড়িয়ে পড়ে ফলে এক খামার বা গোয়াল থেকে অন্য খামার বা গোয়ালে সহজেই ক্ষুরা রোগ বিস্তার লাভ করে।
  • ৪. ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস, চামড়া বা ব্যবহৃত দ্রব্যাদির মাধ্যমে ক্ষুরা রোগের জন্য দায়ি ক্ষতিকারক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে ফলে দ্রুত ক্ষুরা রোগ মহামারী রূপ নেয়।
  • ৫. নতুন কেনা গরুর ক্ষুরা রোগ থাকলে খামারে ক্ষুরা রোগের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
  • ৬. ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরুর সংস্পর্শে থাকা কেও সুস্থ গরুর নিকিট এলে ব্যবহৃত জুতা বা জামার মাধ্যমে ক্ষুরা রোগের জীবাণু খামারে প্রবেশ করতে পারে।
  • ৭. বাতাসের মাধ্যমেও ক্ষুরা রোগের ভাইরাস চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে মহামারী আকারে রেকর্ড সংখ্যক গরুর ক্ষুরা রোগ হতে পারে।



গরুর ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধের উপায়ঃ

  • ১. গরুকে নিয়মিত তথা ৬ মাস অন্তর ক্ষুরা রোগ বা এফএমডি রোগের টিকা দিতে হবে।
  • ২. ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত মৃত পশুকে মাটিতে কমপক্ষে ৫ ফুট গর্ত করে তাতে পুতে ফেলতে হবে, কোনক্রমে খোলা স্থানে ও জলে ফেলে রাখা যাবে না।
  • ৩. খামারে কোনো গরুর ক্ষুরারোগ দেখা দেওয়া মাত্র সুস্থ গরু অর্থাৎ অন্যান্য এঁড়ে, বাছুর, বলদ ও গাভী থেকে রোগাক্রান্ত গরুকে দ্রুত আলাদা করে ফেলতে হবে।
  • ৪. গরুর থাকার স্থান শুষ্ক ও কাদা মুক্ত হতে হবে।
  • ৫. গরুর খাবার পাত্র ও গোয়াল সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন জীবাণুনাশক স্প্রে যেমন FM 30 ব্যবহার করে জীবাণু মুক্ত করতে হবে এবং আসুস্থ গরুর ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ১০০ মি.লি পানিতে ২ গ্রাম কষ্টিক সোডা অথবা ৪ গ্রাম সোডিয়াম কার্বনেট মিশিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • ৬. ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরুর দুধ কোন ক্রমে বাছুরকে খাওয়ানো যাবে না।
  • ৭. খামার বা গোয়ালে প্রবেশের সময় অথবা গরুর সংস্পর্শে যেতে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত হয়ে প্রবেশ করতে হবে।

নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon