শনিবার

পশু পাখিকে জিংক খাওয়ানোর নিয়ম

লেয়ার, পোল্ট্রি ও গরু কে জিংক খাওয়ানোর নিয়ম


এখানে যা থাকছে---

  • জিংক খাওয়ানোর নিয়ম
  • জিংক কি
  • জিংকের উপকারিতা
  • গরুকে জিংক খাওয়ানোর নিয়ম
  • পোল্ট্রি কে জিংক খাওয়ানোর নিয়ম

জিংক খাওয়ানোর নিয়ম, জিংক কি, জিংকের উপকারিতা, গরুকে জিংক খাওয়ানোর নিয়ম, পোল্ট্রি কে জিংক খাওয়ানোর নিয়ম
পশু পাখিকে জিংক খাওয়ানোর নিয়ম


জিংক কিঃ

জিংক (Zinc) এক ধরণের ধাতব পদার্থ। একে জিংক অক্সাইড বলা হয়ে থাকে। জিংক অক্সাইডের রাসায়নিক সংকেত ZnO যা সাদা পাউডার আকারে পাওয়া যায়। অক্সিজেন এবং দস্থার সংমিশ্রণে ZoN গঠিত। আয়রন এর স্বল্পতা রোধে জিংক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।



জিংক কেন প্রয়োজনঃ

প্রাণী দেহে বিশেষ করে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, কুকুর, বেড়াল সহ হাস, মুরগি, কবুতর বা যে কোনো পশু পাখির শরীরে প্রতিদিন খুব সামান্য পরিমাণে জিংকের প্রয়োজন। জিংক প্রাণী দেহে শোষিত হয়ে দেহের অন্যান্য উপাদানের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে দৈহিক বৃদ্ধি ও রক্ত উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি মিনারেল বা খাদ্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে বলে প্রাণীদেহে জিংকের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।



জিংকের উৎসঃ

বিভিন্ন ভাবে প্রাণী, শরীরে জিংকের যোগান দিয়ে থাকে। সাধারণত কাচা ঘাসে জিংক পাওয়া যায়। যে সকল প্রাণী কাচা ঘাস বা সবুজ ঘাস পাতা খায় সে সকল প্রাণীদেহে জিংকের ঘাটতি কম পরিলক্ষিত হয়। তাই কাচা ঘাস সরবরাহ করা গেলে, গরু, ছাগল, ভেড়া বা মহিষ এর খাবারে বাড়তি জিংক সরবরাহ না করলেও চলে। খোলা যায় গায় পালিত পাখি বা মুরগী ঘাস পাতা খায় তাই এসকল পাখি দের বাড়তি জিংক না দিলেও চলে।



যে সকল প্রাণীকে বাড়তি জিংক সরবরাহ করতে হবেঃ

যে সকল প্রাণী বা পাখি তথা গরু, ছাগল, হাস, মুরগি আবদ্ধ অবস্থায় পালিত হয় সে সকল পশু পাখিকে বাড়তি জিংক সরবরাহ করতে হয়। পোল্ট্রি বা বয়লার দের অবশ্যই খাবারের সাথে নিয়মিত জিংক সরবরাহ করতে হবে। খামারে পালিত গরু, ছাগল বা মহিষকে খাবারের সাথে নিয়মিত জিংক সরবরাহ করা প্রয়োজন। এছাড়া দুগ্ধবতী গাভী বা দুধ দেয় এমন পশু পাখিকে নিয়মিত জিংক সরবরাহ না করলে দুধ উৎপাদন কমে যায়। ডিম দেয় এমন হাস মুরগিকে নিয়মিত জিংক সরবরাহ করতে হবে তাতে ডিম উৎপাদন বেড়ে যাবে এছাড়া ডিমের খোসা মজবুত করতে জিংক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।



গরু, ছাগল, হাস, মুরগির জন্য জিংকের উপকারিতা বা প্রয়োজনীয়তাঃ

জিংকের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।  গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, কুকুর, বেড়াল ও হাস, মুরগি বা পল্ট্রি বা বয়লার এর শরীরে অন্যান্য খাদ্য উপাদান সঠিক মাত্রায় শোষণে জিংক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম্নে জিংকের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো-

  • ১. জিংক আয়রনের জোগান নিশ্চিত করে রক্তশূন্যতা রোধ করে।
  • ২. জিংক পশু পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • ৩. জিংক দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • ৪. জিংক পশু পাখির রুচি বৃদ্ধি করে সঠিক মাত্রায় খাদ্য গ্রহণে ভূমিকা রাখে।
  • ৫. জিংক হাড়ের গঠণ মজবুত করে।
  • ৬. হাস, মুরগী ও পোল্ট্রি বা লেয়ার বা সোনালি বা বয়লারের দ্রুত পশম বা পালক গজাতে সহায়তা করে ও পশমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
  • ৭. জিংক ডিমের খোসা শক্ত করে ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
  • ৮. জিংক গবাদিপশুর লোম পড়ে যাওয়া রোধ করে ও লোম চামড়া মসৃণ ও চকচকে করে।
  • ৯. পশু পাখির ডায়রিয়া প্রতিরোধে জিংক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • ১০. জিংক গরু ছাগলের ক্ষুর বেড়ে যাওয়া রোধ করে এবং চর্মরোগ প্রতিহত করেম
  • ১১. জিংক গরু ছাগল ও পশু পাখির খাদ্য হজমে সহায়তা করে।



গরু, ছাগল, হাস, মুরগি ও পোল্ট্রি বা বয়লার বা লেয়ার কে জিংক খাওয়ানোর মাত্রা ও নিয়মঃ

হাস, মুরগি, পোল্ট্রি ও লেয়ার ও বয়লার কে প্রতি মাসে ৫-৭ দিন প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ মিলিলিটার পরিমাণ জিংক মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। গরু, ছাগল, মহিষ বা গবাদিপশু কে প্রতি ৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২০ মিলিলিটার করে প্রতি মাসে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে। জিংক কোনো ঔষুধ নয় তাই মাত্রা বেশি বা কম হলে কোনো প্রকার সমস্যা নেই। দুগ্ধবতী, গর্ভবতী, রোগাক্রান্ত ও মোটাতাজা করণে ব্যবহৃত পশু পাখিকে মাত্রা বেশি করে নিয়মিত জিংক খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। ক্রিমির ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশন প্রয়োগের পর ৫-৭ দিন ধরে জিংক খাওয়ানো উত্তম। ৩০ লিটার দুধ দেয় এমন গাভীকে প্রতিদিন ৩২ মিলিগ্রাম জিংক খাওয়ানো প্রয়োজন।



জিংক এর মূল্যঃ

জিংক স্বল্প মূল্যে বাজারে পাওয়া যায়। মানুষের জিংক আর পশু পাখির জিংক এক হলেও পশু পাখির জন্য তৈরি জিংক মানুষের খাওয়া নিরাপদ নয়। তাই মানুষের জন্য ব্যবহৃত জিংকের চেয়ে পশুপাখির জন্য ব্যবহৃত জিংকের দাম তুলনামূলক কম। 



জিংক বাজারে কোথায় এবং কিভাবে পাওয়া যায়ঃ

যে কোনো ভেটেনারী বা ওষুধের দোকানে জিংক পাওয়া যায়। জিংক সিরাপ বা লিকুইড আকারে পাওয়া যায় আবার গুড়া বা পাউডার আকারেও পাওয়া যায়। জিস ভেট, এসআর জিং, ফেরো জিং, জিংক ভেট সহ বিভিন্ন নামে জিংক বাজারে পাওয়া যায়। জিংকের সাথে ভিটামিন ও মিনারেল যোগ করে অনেক কম্পানি বাজারে জিংক সরবরাহ করে থাকে। ট্যাবলেট বা বোলাস আকারেও জিংক পাওয়া যায়। 


নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon