রবিবার

মুরগির রানীক্ষেত রোগের ঔষুধ ও চিকিৎসা

মুরগির সবুজ ও চুনা পায়খানার ওষুধ ও ভ্যাকসিন


এখানে যা থাকছে---

  • রানীক্ষেত রোগের ঔষুধ
  • রানীক্ষেত রোগের চিকিৎসা
  • মুরগির সবুজ পায়খানার চিকিৎসা
  • মুরগির চুনা পায়খানার চিকিৎসা
  • রানীক্ষেত রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন

রানীক্ষেত রোগের ঔষুধ, রানীক্ষেত রোগের চিকিৎসা, মুরগির সবুজ পায়খানা চিকিৎসা, মুরগির চুনা পায়খানা চিকিৎসা, রানীক্ষেত রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন
রানীক্ষেত রোগের ঔষুধ ও চিকিৎসা


রানীক্ষেত রোগ কিঃ

রানীক্ষেত বা Newcastle Disease হল ভাইরাস জনিত একটি মারাত্মক রোগ। সাধারণত পাখি জাতীয় প্রাণীদের রানীক্ষেত রোগ হয়ে থাকে। গৃহপালিত পাখি যেমন, মুরগি, হাস, কবুতর, টার্কি বা যে কোনো পাখির এ রোগ বেশি হয়। অধিক শীত ও বসন্ত কালে রানীক্ষেত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি পরিলক্ষিত হলেও বছরের যে কোনো সময় এ রোগ দেখা দিতে পারে। এটি ভাইরাস জনিত রোগ হওয়ায় চিকিৎসা পদ্ধতি সীমিত এবং মুরগির মারাত্মক রোগ গুলোর অন্যতম।



রানীক্ষেত রোগের বিভিন্ন নামকরণঃ

রানীক্ষেত রোগ কে এশিয়া অঞ্চলে Ranikhet Disease বলে ডাকা হয়ে থাকে। এছাড়া রানীক্ষেত রোগ কে Newcastle Disease, Torticolis, Twisted,  Circling Movement (মুরগির ঘূর্ণি রোগ), Star Gazing, Avian Distemper, Greenish Diarrhoea (সবুজ পাতলা পায়খানা), Fowl Pest (পাখির মড়ক), Pneumoencephalitis ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়।



রানীক্ষেত রোগের কারণঃ

রানীক্ষেত রোগ মুরগির মারাত্মক রোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ তাই এন্টিভাইরাস ঔষুধ বা এন্টিবায়োটিক ঔষুধ প্রয়োগে কোনোপ্রকার ফল পাওয়া যায় না। একমাত্র ভ্যাকসিন বা টিকা প্রয়োগে ভালো ফল আশা করা যেতে পারে। Newcastle Disease Virus রানীক্ষেত রোগের জন্য দায়ী। এই ভাইরাস এত দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে ঔষুধ শরীরে কাজ করার আগেই বেশির ভাগ মুরগি মারা যায়। এছাড়া লক্ষণ প্রকাশের আগেই এ রোগ শুরু হওয়ায় চিকিৎসা করা অনেকটা সমস্যাযুক্ত। তাই মুরগির রানীক্ষেত হলে দ্রুত ও সুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা দিতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রানীক্ষেত রোগ থেকে মুরগিকে রক্ষা করা যেতে পারে।



রানীক্ষেত ভাইরাস বা Newcastle Disease Virus এর জীবনকালঃ

Newcastle Disease Virus সরাসরি সূর্যের আলোতে ৩০ মিনিট পর্যন্ত বেচে থাকতে পারে। ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার উপরে রানীক্ষেত ভাইরাস মারা যায়। Newcastle Disease Virus বা রানীক্ষেত ভাইরাসের ৪ টি প্রজাতি বা স্ট্রোন রয়েছে এবং স্ট্রোন গুলোতে মোট ১৬ টি সেরোটাইপ বা উপপ্রজাতি রয়েছে। ভ্যাকুয়াম টিউবে বা ফ্রিজে শুষ্ক ও ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রার নীচে Newcastle Disease Virus ৩০ দিন পর্যন্ত বেচে থাকতে পারে। পাখির সংস্পর্শ, লালা, খাবার ও বাতাসের মাধ্যমে রানীক্ষেত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।



রানীক্ষেত রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসের স্ট্রেন বা প্রজাতি সমূহঃ

রানীক্ষেত রোগের জন্য Newcastle Disease Virus দায়ী। এই ভাইরাসের ৪টি অন্যতম স্ট্রেন বা প্রজাতি রয়েছে। প্রজাতি গুলো হল-

  • ১. লেন্টোজেনিক স্ট্রেন (Lentogenic Strain)
  • ২. মেসোজেনিক স্ট্রেন (Mesogenic Strain)
  • ৩. ভেলোজেনিক স্ট্রেন (Velogenic Strain)
  • ৪. এভিরুলেন্ট স্ট্রেন (Avirulent Strain)



রানীক্ষেত ভাইরাসের লেন্টোজেনিক স্ট্রেনে আক্রমণের লক্ষণঃ

লেন্টোজেনিক স্ট্রেন সাধারণত মুরগির বাচ্চায় আক্রমণ ঘটায়। বয়স্ক মুরগিতে এই স্ট্রেন আক্রমণ করতে পারে না। লেন্টোজেনের আক্রমণে মুরগির বাচ্চার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ঘনঘন পানি পান করে। লেন্টোজেনিক স্ট্রেনে আক্রমণের ৯০ ঘন্টা পর মুরগির বাচ্চা মারা যায়।



রানীক্ষেত ভাইরাসের মেসোজেনিক স্ট্রেনে আক্রমণের লক্ষণঃ

মেসোজেনিক স্ট্রেন সব ধরণের মুরগিতে আক্রমণ ঘটাতে পারে। তবে বাচ্চা মুরগিতে বেশি সংক্রমণ ঘটায়। মেসোজেনিক স্ট্রেনের আক্রমণে পোল্ট্রির ওজন দ্রুত হ্রাস পায়। লেয়ারের ডিম উৎপাদন কমে যায়। ফার্ম লোকসানের সম্মুখীন হয়। মেসোজেনিকের আক্রমনে মুরগি দূর্বল হয়ে না পড়লেও, মুরগির শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বাচ্চা মুরগিতে মেসোজেনিক স্ট্রেনের আক্রমণের ৬০ থেকে ৯০ ঘন্টার মাঝে মুরগি মারা যায়।



রানীক্ষেত ভাইরাসের ভেলোজেনিক স্ট্রেনে আক্রমণের লক্ষণঃ

ভেলোজেনিক স্ট্রেনের আক্রমণ ঘটলে, কোনো প্রকার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়ায় মুরগি মারা যেতে পারে। অনেক সময় শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, খকখক শব্দ করে, দূর্বলতা দেখা যায়, চোখের চারি দিকে ফুলে ওঠে, চুনা ও সবুজ পায়খানা করে, দাপাদাপি করে মুরগি হঠাৎ মারা যায়। এটি খুবি মারাত্মক স্ট্রেন। এই স্ট্রেনে আক্রমণ করলে দ্রুত চিকিৎসা না করালে প্রায় ১০০% মুরগি মারা যায়। বাচ্চা মুরগিতে ভেলোজেনিক স্ট্রেন আক্রমণ করলে ৬০ ঘন্টার  মাঝে মুরগির বাচ্চা মারা যায়।



রানীক্ষেত ভাইরাসের এভিরুলেন্ট স্ট্রেনে আক্রমণের লক্ষণঃ

রানীক্ষেত ভাইরাসের এভিরুলেন্ট প্রজাতির আক্রমণে মুরগির তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না। তাই এভিরুলেন্ট প্রজাতি মুরগির জন্য নিরাপদ। 



রানীক্ষেত রোগের লক্ষণঃ

মুরগির বা পোল্ট্রির বা বয়েলার বা দেশি মুরগির রানীক্ষেত রোগ হলে নানারকম উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন-

রানীক্ষেত রোগের ঔষুধ, রানীক্ষেত রোগের চিকিৎসা, মুরগির সবুজ পায়খানা চিকিৎসা, মুরগির চুনা পায়খানা চিকিৎসা, রানীক্ষেত রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন
মুরগির রানীক্ষেত রোগ

  • ১. মুরগি সবুজ পায়খানা করতে শুরুকরে বা মুরগির সবুজ ডায়রিয়া শুরু হয়।
  • ২. মুরগির চুনা পায়খানা শুরু হতে পারে এবং চুনা পায়খানা মুরগির পিছনের লোমে লেগে থাকতে দেখা যায়।
  • ৩. রানীক্ষেত হলে মুরগির শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ফলে হা করে নিশ্বাস নিতে চেষ্টা করে এবং মাঝে মাঝে খকখক শব্দ করে।
  • ৪. রানীক্ষেত রোগ হলে মুরগির দুর্গন্ধ যুক্ত পায়খানা দেখা দেয়।
  • ৫. রানীক্ষেত রোগে মুরগি ঝুপ মেরে বসে থাকে বা ঘাড় বেকে বসে থাকে।
  • ৬. রানীক্ষেত রোগ হলে মুরগি দূর্বল হয়ে পড়ে এবং হাটতে চলতে প্রচন্ড দূর্বলতা অনুভব করে।
  • ৭. রানীক্ষেত রোগ হলে মুরগির চোখের চারিদিকে ফোলা ফোলা ভাব পরিলক্ষিত হতে পারে।
  • ৮. রানীক্ষেত রোগ হলে দেশি ও লেয়ার মুরগির চুনা পায়খানা দেখা দেয় এবং ডিমের খোসা নরম ও খোসাবিহীন হতে পারে।



রানীক্ষেত হলে মুরগির সবুজ পায়খানা কেন হয়ঃ

বেশির ভাগ সময়ে মুরগির সবুজ পায়খানা রানীক্ষেত রোগের কারণে হয়ে থাকে। মুরগির রানীক্ষেত রোগ হলে খাবার গ্রহণ কমে যায়। খাবার সাধারণত পিত্ত থলি থেকে নির্গত পিত্ত রস দ্বারা হজম হয়। রানীক্ষেত রোগ হলে খাবার কম খেলেও পিত্ত রস একি পরিমাণে নির্গত হয় ফলে খাবারের তুলনায় পিত্তরস বেশি থাকায় পায়খানার সাথে পিত্তরস বেরিয়ে আসে। তাই রানীক্ষেত হলে মুরগির পায়খানা সবুজ বা পিত্তবর্ণ দেখায়।



রানীক্ষেত হলে মুরগির চুনা পায়খানা কেন হয়ঃ

বেশিরভাগ মারাত্মক রোগে বিশেষ করে মুরগির রানীক্ষেত রোগে সবুজ পায়খানার সাথে সাথে চুনা পায়খানা দেখা দেয়। রানীক্ষেত হলে শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, জ্বর আসে, ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ কমে যায়। শরীরে ক্যালসিয়াম শোষিত না হওয়ায় তা পায়খানার সাথে বেরিয়ে আসে ফলে রানীক্ষেত রোগ হলে মুরগির সাদা বা চুনা পায়খানা দেখা দেয়। ডিম পাড়া মুরগির চুনা পায়খানা বেশি পরিমাণে নির্গত হয়। মুরগির মলদ্বারের পাশের লোমে চুনা পায়খানা লেগে থাকে। যা দেখে সহজেই বোঝা যায় মুরগি রোগাক্রান্ত। 



রানীক্ষেত রোগের ঔষুধ ও চিকিৎসাঃ

রনীক্ষেত রোগের প্রকৃত পক্ষে কোনো চিকিৎসা বা ঔষুধ নেই। রোগ প্রকাশের সাথে সাথে ঔষুধ প্রয়োগ করা না গেলে রানীক্ষেত থেকে মুরগিকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই টিকা প্রদানের মাধ্যমে রানীক্ষেতের প্রতিরোধ হল রানীক্ষেত থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায়। ফার্মে রানীক্ষেত রোগ দেখা দেওয়া মাত্র অসুস্থ মুরগিকে আলাদা করতে হবে। জীবাণুনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি সকল সুস্থ মুরগিকে দ্রুত টিকা বা ভ্যাকসিন ও ওষুধ প্রয়োগ করলে রানীক্ষেতের মড়ক থেকে মুরগিকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। এছাড়া রানীক্ষেত হলে অসুস্থ মুরগীর অন্যান্য উপসর্গের উপর নির্ভর করে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের জন্য এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা উচিত। দূর্বলতা কাটিয়ে মুরগিকে সুস্থ করে তোলার জন্য নানারকম ভিটামিন ও মিনারেল খাওয়াতে হবে। ফার্মে রানীক্ষেত রোগ দেখা দেওয়া মাত্র সুস্থ ও অসুস্থ সকল প্রকার মুরগিকে নিম্নোক্ত ঔষুধ গুলি প্রয়োগ করতে হবে-

  • ১. রানীক্ষেতের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্র অসুস্থ মুরগিকে আলাদা করে ফেলতে হবে। সকল সুস্থ মুরগিকে রানীক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন বা টিকা- লাসোটা, পানির সাথে মিশিয়ে মাত্রা অনুযায়ী প্রথম দিন খাওয়াতে হবে। টিকা বা ভ্যাকসিন খাওয়ানোর পরের দিন থেকে সকল সুস্থ মুরগিকে নিচের ২ নং ঔষুধ বা এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে তবে ৩ ও ৪ নং ঔষুধ টিকা দেওয়ার দিন থেকেই খাওয়াতে হবে। আর অসুস্থ মুরগিকে টিকা না দিয়ে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে অর্থাৎ ২ নং ওষুধ থেকে শুরু করতে হবে। এছাড়া টিকা খাওয়াতে বিলম্ব হলে বা দ্রুত টিকা পাওয়া না গেলে যত দ্রুত সম্ভব টিকার জন্য অপেক্ষা না করে ২নং ঔষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
  • ২. ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এন্টিবায়োটিক ঔষুধ হিসেবে Chlortetracycline গ্রুপের ঔষুধ যেমন- Cotra-Vet. -Powder. অথবা, Enrofloxacin গ্রুপের ঔষুধ যেমন- Enflox-Vet. Oral Solution. অথবা, Amoxicillin গ্রুপের ঔষুধ যেমন- Moxacil-Vet. Powder. জলের সাথে মিশিয়ে প্যাকেটের গায়ে থাকা মাত্রা ও নিয়ম অনুযায়ী পরপর ৩ দিন খাওয়াতে হবে, অথবা, Gentamicin গ্রুপের ঔষুধ যেমন- Genacin-Vet. Injection. ১মিলি ঔষুধের সাথে ১৯ মিলি বিশুদ্ধ ও পরিশোধিত জল মিশিয়ে প্রতিটি মুরগিকে ১সিসি করে ইনজেকশন করতে হবে বা লেবেলে লেখা মাত্রা অনুযায়ী প্রতিটি মুরগির মাংসে দিনে১ বার করে পরপর ৩ দিন ইঞ্জেকশন করতে হবে। (উপরের পাওডার বা সলিউশন থেকে Gentamicin গ্রুপের ইঞ্জেকশন অধিক কার্যকরী তবে, ইঞ্জেকশন ব্যবহার না করে কেও পাওডার বা সলিউশন ব্যবহার করলে তা সকাল থেকে দূপুর ১২ টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৪ টা থেকে সারা রাত জলে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।)
  • ৩. তরল পায়খানা ও ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে দূর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য স্যালাইন ও Electrolyte হিসেবে যেকোনো Electrolyte পাওডার বা সলিউশন প্যাকেটের গায়ে লেখা মাত্রা অনুযায়ী জলে মিশিয়ে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত খাওয়াতে হবে। (দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত জলে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।)
  • ৪. দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য Vitamin C সমৃদ্ধ ঔষুধ যেমন- Civit-Vet. Powder. প্যাকেটের গায়ে থাকা মাত্রা অনুযায়ী জলের সাথে মিশিয়ে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত খাওয়াতে হবে। (দুপুর ২ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত জলে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।)
  • ৫. জীবাণু ধ্বংস করতে জীবাণুনাশ হিসেবে FAM -30 বা ব্লিচিং পাওডার বা যে কোনো গ্রুপের জীবাণুনাশক ফার্মের সর্বত্র বা মুরগির ঘরের ভিতর-বাহির সহ আশেপাশে স্প্রে করতে হবে এবং মুরগির খাবার ও জলের পাত্র জীবাণুনাশ মিশ্রিত জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।



রানীক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন বা টিকাঃ

রানীক্ষেত রোগের অন্যতম সমাধান মুরগিকে নিয়মিত ভ্যাকসিন দেওয়া। রানীক্ষেত ভ্যাকসিনের কয়েকটি প্রকার রয়েছে, যেমন - BCRDV এবং ND Clone-30 ইত্যাদি নানান নামে এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রকারে পাওয়া যায়। রানীক্ষেত ভ্যাকসিন মুরগির বয়স বাড়ার সাথে সাথে কয়েকটি পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হয়। টিকা জলে মিশিয়ে চোখে বা খাবার পানিতে বা ইঞ্জেকশন আকারে প্রয়োগ করতে হয়।



রানীক্ষেত রোগের টিকা দেওয়ার নিয়মঃ

রানীক্ষেত ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত। সাধারণত মুরগির বাচ্চার বয়স ৪-৭ দিন হলে প্রথম রানীক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়। এই সময় রানীক্ষেত ভ্যাকসিন (BCRDV) নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিষ্কার পানিতে গুলিয়ে বাচ্চা মুরগির চোখে ড্রপে করে দেওয়া যায় অথবা খাবার পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো যায়। এর পর মুরগির বয়স ২১ দিন হলে একই নিয়মে রানীক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন (BCRDV) প্রয়োগ করতে হয়। এর পর মুরগির বয়স ২ মাস বা ৬০ দিন পূর্ণ হলে রাণীক্ষেত টিকা (ND Clone-30) প্রদান করতে হয়। এই বয়সের মুরগিকে রানীক্ষেত টিকা ইঞ্জেকশন আকারে রানের মাংসে প্রয়োগ করা উত্তম। তবে খাবার জলের সাথেও প্রয়োগ করা যায়। রানীক্ষেত টিকা প্রদানের ৭ দিনের মাঝে মুরগির রানীক্ষেত ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং তা ৬ মাস পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তাই প্রতি ৬ মাস অন্তর মুরগিকে রানীক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন বা টিকা প্রদান করতে হয়। রানীক্ষেত ভ্যাকসিন সুস্থ মুরগিকে প্রয়োগ করতে হয়। তাই টিকা প্রয়োগের সময় অসুস্থ মুরগিকে আলাদা করে নেওয়া উচিত।  শুধু ৬ মাস অন্তর নয়, ফার্মে যখনি রানীক্ষেত রোগ দেখা দেবে তখনি সকল সুস্থ মুরগিকে রানীক্ষেত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। 



রানীক্ষেত রোগের প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া চিকিৎসাঃ

রানীক্ষেত খুব মারাত্মক রোগ।  রানীক্ষেত রোগের প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া চিকিৎসা তেমন কার্যকর নয়।



রানীক্ষেত রোগ প্রতিরোধের উপায়ঃ

প্রতিরোধি রানীক্ষেত থেকে মুরগিকে রক্ষার অন্যতম উপায়। নিম্নে রানীক্ষেত রোগ প্রতিরোধের উপায় সমূহ তুলে ধরা হল।

  • ১. নিয়মিত মুরগিকে রানীক্ষেত রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।
  • ২. অসুস্থ মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসা দিতে হবে এবং সুস্থ মুরগিকে সেই সময় রানীক্ষেত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।
  • ৩. জীবাণুনাশ দিয়ে নিয়মিত মুরগির খাবার পাত্র পরিষ্কার করতে হবে এবং ফার্মের সর্বত্র জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।
  • ৪. ফার্মে রানীক্ষেত রোগ দেখা দিলে ফার্মের সকল মৃত মুরগিকে মাটিচাপা দিতে হবে। বেচে থাকা বা সুস্থ হয়ে ওঠা অন্যান্যা সকল মুরগিকে বিক্রি করে ২১ দিন অপেক্ষা করে নতুন মুরগি ফার্মে ওঠাতে হবে।
  • ৫. ফার্মে প্রবেশের সময় জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত হয়ে ফার্মে প্রবেশ করতে হবে।
  • ৬. মুরগিকে নিয়মিত ভিটামিন, মিনারেল ও পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে।



সাধারণত পায়খানা ও অন্যান্য উপসর্গ দেখে মুরগির রানীক্ষেত রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। পূর্ব থেকে টিকা না দেওয়া থাকলে রানীক্ষেত রোগে প্রায় ১০০% মুরগি মারা যায়। তাই রানীক্ষেত মুক্ত মুরগি পেতে নিয়মিত টিকা প্রদানের উপর জোর দিতে হবে। রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ পাওয়া মাত্র দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। দেশি মুরগি, পোল্ট্রি বা বয়েলার, লেয়ার সহ যে কোনো মুরগি বা পাখি জাতীয় ফার্ম থেকে মুনার্জনের প্রথম শর্ত ফার্ম কে রোগ মুক্ত রাখা। মনে রাখতে হবে সকল নিয়ম কানুন ঠিক রাখার মাধ্যমে রানীক্ষেত মুক্ত ফার্ম গড়ে অধিক মুনাফার্জন সম্ভব।


নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon